সেই সকালেই ভাবনাটা
রাশেদের মাথায়
ভর করেছিল
এখনো নামেনি।
টিভিতে যে
অনুষ্ঠান দেখা
হয়েছে সেটা
থেকেই এর
উৎপত্তি।
মাথা থেকে
এটা না
নামার উল্লেখযোগ্য
কারণও আছে।
এটা ছোটদের
একটি অনুষ্ঠান।
শিশু-কিশোরদের
অভিনীত মুক্তিযুদ্ধের
উপর একটি
নাটক। মুক্তিযুদ্ধের
কোনো নাটক
মানে একটা
অপরাধী চরিত্র
থাকা। এখানেও
ছিল। অপরাধী
চরিত্রে অভিনয়
করা শিশুটিকে
যে লেবাসটা
দিয়ে সাজানো
হয়েছে সেটাই
রাশেদকে চিন্তামুখী
করেছে। শিশু
মনের উপযোগী
করে অনুষ্ঠানটি
তৈরী। তাই
দর্শকও শিশুরাই।
রাশেদের ভাবনাটার
গভীরতা বেড়েছে
এখান থেকেই।
তাদের নিষ্পাপ
শিশু মনে
কি ভিত
তৈরি হবে
না যে
এমন লেবাসধারী
মানুষেরা এ
ধরনের খারাপ
চরিত্রের হয়ে
থাকে?
ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র
রাশেদ। থাকে
ছাত্রাবাসে। রুমমেটের একটি টিভি
থাকায় সময়
অসময়ে কিছু
অনুষ্ঠান দেখা
হয়। অবশ্য
চ্যানেল নির্বাচনের
ক্ষেত্রে মালিক
বন্ধুটিরই আধিপত্য বেশি থাকে। সেটাই
স্বাভাবিক। তা-ই মেনে নেয়া
লাগে। টিভিটা
থাকায় সময়মত
সংবাদগুলো দেখতে সুবিধা হয়। তবে
অসুবিধাও আছে।
মাঝে মাঝে
পড়াশুনার বেশ
কিছু সময়
বিনোদনের দখলে
চলে যায়।
আবার যখন
ভালো কিছু
দেখার পরিবর্তে
খেলাধুলা বা
এ জাতীয়
বিষয় নিয়ে
বেশি মাতামাতি
শুরু হয়
তখন মনে
হয় আপদটা
বিদায় হলে
বাঁচি। এসব
কিছুর ভিতর
থেকেই সবদিক
বিচার-বিশ্লেষণ,
যোগ-বিয়োগ
করে যেটা
ফলাফল পাওয়া
গেছে তা
হলো- টিভিটা
রাখার প্রয়োজন
আছে।
মনটা স্বাভাবিক হচ্ছে
না তার।
যথেষ্ট পরিমাণে
চেষ্টা করা
হয়েছে অন্য
ভাবনায় মনোনিবেশ
করার; কিন্তু
লাভ হয়নি।
ঘুরে ফিরে
সেই চিন্তাটাই
মনের ভিতর
সারাক্ষণ ঘুরছে।
রুমের ভিতর
থেকে বের
হয়ে বাইরে
গাছের নিচে
বেঞ্চটাতে গিয়ে বসে। নাটকের দৃশ্যপটগুলো
মনের ভিতর
ঘুরপাক খাচ্ছে
বারংবার। মুক্তিযুদ্ধ
ভিত্তিক অনেক
নাটকই আগে
দেখা হয়েছে
কিন্তু সেগুলো
এমনভাবে ভাবনায়
আসেনি। মুক্তিযুদ্ধ
কেন্দ্রিক কিছুতে আগ্রহ থাকায় এ
বিষয়ক কোন
লেখা বা
অনুষ্ঠান একটু
বেশিই দেখা
হয়। তাই
এসব দেখতে
দেখতে মনের
মাঝে ধারণা
তৈরী হয়েছে
যে, মুক্তিযুদ্ধের
উপর কোনো
ঘটনা নিয়ে
অনুষ্ঠান করা
মানেই ধরে
নেয়া যায়
তার মাঝে
একটা অপরাধী
চরিত্র থাকবে।
তাকে চেনার
উপায়টাও খুব
সহজ। যুদ্ধাপরাধীর
চরিত্র সাজাতে
এর নির্মাতারা
কয়েকটা কমন
জিনিস সনাক্ত
করে থাকে
যেমন- লম্বা
জামা, টুপি
ও দাড়ি
নামক জিনিস
গুলো থাকবেই
ঐ চরিত্রের
মাঝে। কাঁধের
উপর রোমাল
থাকতে পারে
নাও পারে,
এটা আবশ্যিক
নয়। তবে
অন্তরে কু-মতলব আর
বাইরে সুফী
সাজানোর ভাবটা
একটু বেশি
পরিমাণে বুঝাতে
চাইলে সেক্ষেত্রে
রুমালের সাথে
পাগড়ীও যোগ
করা হয়।
রাশেদ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক
এ ধরনের
অনুষ্ঠান দেখে
আর ভাবে,
কিন্তু কোনো
হিসেব মেলাতে
পারে না।
স্বাধীনতা আমাদের গর্ব। আমাদের জাতীয়
জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ
অর্জন। এর
সাথে ঐ
লেবাসের কি
কারণে বৈপরীত্য
থাকতে পারে
তা মাথায়
আসে না।
যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে যে
কার্টুন তৈরী
হয় তাতে
দেখা যায়
দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালার লোলুপ ও ভয়ঙ্কর
চেহারার কোনো
এক মুখোচ্ছবি।
এই লেবাসটা
যেন যুদ্ধাপরাধীদেরই
লোগো
বা আইকন; যা দেখলেই এ
গোষ্ঠীকে চেনা
যাবে। এসব
ব্যাপারগুলো রাশেদের মনে ভাবনা জাগায়,
এই লেবাস
ধারণ করা
মানেই কি
মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে যাওয়া? ভাবনা আরো
গভীর হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করণের জন্য যে
জিনিসগুলো মার্ক করা হয়েছে তা
মূলত ইসলামের
অনুসারীদের উপর অর্পিত কিছু বাহ্যিক
জিনিস। যাদের
ঈমান যত
মজবুদ তারা
তত বেশি
আমল করে।
তাদের সাজ-সজ্জা বা
লেবাসেও আসে
সেসবের ছোঁয়া।
তারা প্রিয়
নবী হযরত
মুহাম্মদ (স.) এর সুন্নতী পোশাক
আবর্তন করে
নিজের শরীরে।
মুখে শোভা
পায় কোমল
ও মসৃন
দাড়ি। মায়াবী
হয়ে ওঠে
মুখমন্ডল। আর এই ধরনের সুন্দর
চেহারাকে কী
বিকৃতরূপেই না উপস্থাপন করে ওরা।
মনে প্রশ্ন
জাগে আসলেই
কি সেসময়
এধরনের মানুষেরা
মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল?
যুদ্ধ দেখেনি রাশেদ।
দেখেনি এই
প্রিয় দেশটির
জন্য কারা
পক্ষে আর
কারা বিপক্ষে
কাজ করেছে।
তবে মুক্তিযুদ্ধের
উপর রচিত
নামী দামী
অনেক লেখকেরই
বই পড়েছে।
অনেক তথ্যচিত্রও
জনেছে। সেখানে
এসব মানুষদের
কথা বেশ
উল্লেখ্য রয়েছে।
এ কারণে
কথাগুলোকে বিশ্বাসে নিতে হয়। তবে
বিশ্বাসে নিলে
আরো একটা
ভাবনা সামনে
এসে দাঁড়ায়।
তা হলো-
তাদের লেবাসটা
তো তাদের
ব্যক্তিগত সৃষ্ট নয়, তাদের আমল
আখলাকও নিজস্ব
নিয়মে নয়,
সবই ইসলামের
নীতি অনুসারে।
তাহলে তারা
যদি সত্যিই
মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকে
তবে এই
সিদ্ধান্তে কি ইসলামের সমর্থন ছিল?
রাশেদের একাকীত্বের সঙ্গী
ভাবনা। গাছের
ছায়ায় এই
বেঞ্চটাতে একা বসলেই এই সঙ্গীটা
এসে হাজির
হয়। হাজির
হয়েছে আজওকে।
পায়ের অদূরে
একটা পিপড়ার
জটলা। লাল
লাল পিঁপড়াগুলোর
দিকে তাকিয়ে
আছে সে।
ধীরে ধীরে
দৃষ্টি ঝাঁপসা
হয়ে আবারও
ডুবে যায়
ভাবনায়। ভাবনার
ভিতরে থেকেই
উদ্ভুত প্রশ্নের
উত্তর খোঁজার
চেষ্টা করে।
স্বদেশপ্রেম তো ঈমানেরই অংশ। আমাদের
প্রাণপ্রিয় নবীজী যখন দুষমনের কারণে
হিযরত করেছিলেন
তখন তিনি
বার বার
পিছনে ফিরে
তাকাচ্ছিলেন প্রিয় এলাকার মায়ায়। যাওয়ার
সময় বলেছিলেন,
'হে মক্কা
আমি তোমাকে
ভালোবসি। আমি
তোমাকে ছেড়ে
যেতাম না
যদি কাফেররা
আমার বিরুদ্ধে
যড়যন্ত্র না
করত।' পবিত্র
কুরআনেও জন্মভূমিকে
ভালোবাসার কথা উল্লেখ রয়েছে বেশ
কয়েক জায়গায়।
বাংলাদেশের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও
এই যুদ্ধ
সংগঠিত হওয়ার
কারণগুলো পর্যবেক্ষণ
করে একটা
সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়।
ঐ লেবাসধারী
মানুষেরা যদি
বিপক্ষে অবস্থান
নিয়েই থাকে
তবে তা
কোন দিক
থেকে ইতিবাচক
হিসেবে নিয়েছে
তা ঠিক
স্পষ্ট নয়।
যদি মুসলিম
জাতিগত দিক
দিয়ে ধরা
হয় তবু
তো নিজের
বিবেক থেকে
সম্মত হওয়া
যায়না। কেননা
ইসলামে তো
কারো অধিকার
বঞ্চিত বা
হক নষ্ট
করার সম্মতি
নেই। অথচ
পাকিস্তানের তদানীন্তন শাসকগোষ্ঠী ইসলামের অনুসারী
হয়েও তা
করেছে বিভিন্নভাবে।
তাদের অধীনে
থাকা সময়কালের
ইতিহাস সেটাই
সাক্ষ্য দেয়।
এ অঞ্চলের
তথা বাঙ্গালীদের
মধ্যে যত
যোগ্য প্রার্থীই
থাক না
কেন উচ্চপদস্থ
কোন কর্মকর্তার
আসন তাদের
ভাগ্যে জুটতো
না কখনো।
এ দিকের
মানুষেরা তাদের
উৎপাদিত
রপ্তানিযোগ্য পন্যের প্রাপ্য বিনিময়ও পায়নি
ঠিক মতো।
রাষ্ট্র কর্তৃক
নাগরিকদের যতটুকু সুবিধা ছিল তাতেও
তারতম্য ছিল
পশ্চিম ও
পূর্ব পাকিস্তনের
মানুষদের মধ্যে।
এমনিভাবে প্রতিটা
ক্ষেত্রেই যখন বাঙ্গালীদের বঞ্চিত, বিতাড়িত
ও অপদস্ত
হওয়ার মাত্রা
বেড়ে যায়
তখনই সংগঠিত
হয় পাকিস্তানীদের
বেড়াজাল থেকে
মুক্ত হওয়ার
সংগ্রাম। যুদ্ধপূর্ববর্তী
ও মধ্যবর্তী
সময়গুলোতে তাদের কাছ থেকে যে
ধরনের ব্যবহার
পাওয়া গেছে
তার উপর
ভিত্তি করে
এই ভাবনাটাকে
একটা সিদ্ধান্তের
দিকে এগিয়ে
যাওয়া যায়।
সে সময়টাতে
তারা বাংলার
নিরীহ নারীদের
উপর যেভাবে
পাশবিক নির্যাতনে
মেতে উঠেছিল
তা কোনোমতেই
ইসলাম সমর্থিত
হতে পারে
না, আর
তাদের এ
কর্মে সহযোগিতা
বা তাদের
সাথে হাত
মিলানোরও কোন
সম্মতি পাওয়ার
কথা নয়
এই শান্তির
ধর্ম ইসলাম
থেকে।
তারা সহযোগিতা পেয়ে
বাঙ্গালীদেরকে নির্যাতন করেছে নানাভাবে। রাশেদ
তার এক
চাচীর মুখে
শুনেছিল তার
নাকি লুটপাটের
বছর বিয়ে
হয়েছে। 'লুটপাটের
বছর' কথাটা
শুনে রাশেদ
ভেবে পায়নি
এটা আবার
কোন বছর।
চাচীর কাছে
ভালোভাবে শুনতেই
তিনি বলেছিলেন,
'তোরা বইতে
পড়িসনি? যে
বছর লোকজন
ধরে নিয়ে
যেত, গুলি
করতো, মানুষের
টাকা-পয়সা,
ধান-চাল
লুটপাট করেছিল
সেই বছর'। রাশেদের
আর বুঝতে
অসুবিধা হয়নি
গ্রাম্য এই
মানুষটি ৭১
সালের কথাই
বুঝাতে চাইছে।
সেই সময়
মুক্তিযোদ্ধা বলে সনাক্ত করে পাকিস্তানি
এবং তাদের
সহযোগিরা এলাকার
সাধারণ মানুষেরও
ধন-সম্পদ
লুটপাট-আত্মসাৎ করেছে।
আর মুক্তিযোদ্ধা
হলে তো
কথাই নেই,
তাদের ধরে
নিসংশভাবে হত্যা করেছে, তাদের বাড়ি-ঘর পর্যন্ত
আগুন জালিয়ে
দিয়েছে। নিজস্ব
ভাষায় কথা
বলতে চাওয়া
ও নিজেদের
অধিকার চাওয়ায়
প্রেক্ষিতে এমন অমানবিক অত্যাচার করা
নিশ্চয় ইসলামের
কোনো নিয়মে
পাওয়া যাবে
না সুতরাং
কিভাবে এই
লেবাসধারী মানুষেরা ঐ কাতারে শামিল
হয়েছিল তা
বুঝে আসে
না রাশেদের।
বরং সে
সময় প্রয়োজন
ছিল দেশপ্রেমের
চেতনায় সাড়া
দিয়ে ত্যাগ
স্বীকারের মাধ্যমে মোমিন ব্যক্তির পরিচয়
দেওয়া এবং
এটাই ছিল
ঈমানের দাবী।
কিন্তু এমন
না হয়ে
বিপরীত হলো
কেন? বিষয়টা
কেমন যেন
ঘোলাটে লাগে।
শুধু এই বিষয়টা
নয়, আরো
একটা বিষয়
অপরিস্কার রয়ে গেছে রাশেদের কাছে।
যেন ভাবতেও
কষ্ট লাগে।
এ কোন
জগতে আছি
আমরা? বেশ
কতকগুলো ইসলামী
বই ছিল
রাশেদের কাছে।
পরে তার
বড় বোন
তাকে 'আল্লাহর
সৈনিক' নামে
একটি ইসলামী
বই উপহার
দিয়েছিল। আগের
বইগুলোর সাথে
নতুন ঐ
বইটা দেখেই
এক রুমমেট
বলেছিল, "এসব বই এখানে রেখনা,
অন্য কোথাও
রেখে এসো।
জেএমবি সন্দেহে
বিভিন্ন জায়গায়
তল্লাশি শুরু
হয়েছে। এসব
বই থাকলে
আমরা সকলেই
বিপদে পড়ে
যেতে পারি।"
রুমমেটের এই
কথাটা রাশেদকে
সেই মুহুর্তে
একেবারে নির্বাক
করে দিয়েছিল।
বুঝানোর চেষ্টা
করেও লাভ
হয়নি। বাধ্য
হয়েই বইগুলো
গ্রামের বাড়িতে
রেখে আসতে
হয়েছে। বোনের
দেওয়া বইটা
এখনো পড়া
হয়নি। দুঃখ
নেই তাতে;
দুঃখ হলো
মানুষের ধারণা
কোথা থেকে
কোথায় নেমে
গেছে। মসজিদের
ইমাম সাহেব
একদিন বলেছিলেন,
তিনি নিজ
প্রয়োজনে আগে
বিভিন্ন অফিস-আদালতে গেলে
অপরিচিতরাও তাকে শ্রদ্ধা করত, সম্মান
জানাতো। আর
এখন গেলে
কেমন যেন
অন্য দৃষ্টিতে
তাকায়। এই
দৃষ্টির মাঝে
নেই কোনো
শ্রদ্ধাবোধ বরং আছে সন্দেহ আর
হেয়ালীপনা। পাল্টে গেছে তাদের সমাদরের
ধরণও। ইমাম
সাহেবের সেদিনের
এই কথাগুলো
মনের পর্দায়
নতুনভাবে ভেসে
উঠেছিল রুমমেটের
কথা শুনে।
এই চিন্তাটাও রাশেদের
ভাবনার যথেষ্ট
সময় দখল
করে থাকে।
ইসলামের নাম
করে যারা
বোমাবাজি করে,
আত্মঘাতী হামলা
করে তাদের
এ কাজ
আসলেই ইসলাম
সম্মত কি
না। ইসলামে
তো জোর-জুলুম করে
কিছু করানোর
নিয়ম নেই।
ইসলাম প্রচার
করতে গিয়ে
প্রিয় নবীজী
কাফেরদের কাছে
অনেক অপমান,
নির্যাতন সহ্য
করেছেন। তবু
কোনো কঠোর
সিদ্ধান্ত নেননি। এমনকি কাফেরেরা যখন
পাথর মেরে
রাসুল (সা.)
এর পবিত্র
শরীরকে রক্তাক্ত
করেছিল তখন
জিব্রাইল (আ.) বলেছিলেন, "হে রাসূল
(সা.) আপনি
শুধু একবার
অনুমতি দেন
আমি তাদের
ধ্বংশ করে
দেই।" রাসুল (সা.) তখনও জিব্রাইল
(আঃ)কে
নিষেধ করেছিলেন।
আর এখন
তো সেরকম
পর্যায়ও তৈরী
হয়নি। যে
মানুষেরা ইসলামী
আইন কায়েম
করার কথা
বলে অহেতুক
বিশৃংখলার সৃষ্টি করছে তারা কি
ভুল ব্যাখ্যায়
বা ভুল
মতবাদে আটকা
পড়েনি? বোমা
ফাটিয়ে মানুষ
হত্যা করে
কোনো মায়ের
কোল খালি
করে, কোনো
স্ত্রীকে বিধবা
বানিয়ে, কোনো
সন্তানকে এতিম
করে কি
শান্তি আসতে
পারে? এবং
এর দ্বারা
ইসলামকে শান্তির
পথ হিসেবে
উপস্থাপন করতে
গিয়ে সবার
কাছে চিহ্নিত
হয়েছে আতঙ্কের
পথ হিসেবে।
হঠাৎ করে
পায়ে প্রচন্ড
জ্বালাময়ী ব্যথায় রাশেদের চিন্তায় ছেদ
পড়ে। কোনো
কীটপতঙ্গের কামড়ের মতো মনে হলো।
উৎসটা
খুঁজতে গিয়ে
দেখা গেল
সেই পিঁপড়াগুলো
পায়ের আরো
কাছে। বুঝতে
আর অসুবিধা
হয়নি। পা
জ্বলে যাচ্ছে।
বিরক্তিতে মেজাজ চরমে উঠলো রাশেদের।
তৎক্ষণাৎ
উঠে দাঁড়িয়ে
পা দিয়ে
ডলে শেষ
করে দিল
সমস্ত জটলাটাকে।
তারপর কি
মনে করে
যেন এক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে
রইল সেই
জটলাটার দিকে।
নির্বাক সে।
আস্তে আস্তে
সে কেমন
যেন হয়ে
যাচ্ছে। কাজটা
কি ঠিক
হলো? কোনো
কোনো পিঁপড়া
পিষ্ট হয়ে
গেছে, কোনোটা
নিস্তেজ আধমরা,
কোনোটা উঠে
দাঁড়াতে গিয়েও
পড়ে যাচ্ছে।
রাশেদের মনে
ভাবনা জাগে,
সব পিঁপড়া
তো আর
অপরাধ করেনি।
তবে শাস্তি
সবাই পাবে
কেন? অন্য
পিঁপড়ারা হয়তো
জানেও না
কি কারণে
তাদের এই
শাস্তি পেতে
হলো। কাজটা
মোটেও ঠিক
হয়নি। যেসব
পিঁপড়া কামড়
দিয়েছে তাদের
খুঁজে বের
করা সম্ভব
নয় তাই
বলে কয়েকটি
পিঁপড়ার জন্য
এতগুলো পিঁপড়াকে
মারা আদৌ
ঠিক হয়নি।
এই অপরাধবোধ
থেকে মুক্ত
হওয়ার জন্য
রাশেদ আবারও
পিছনের ভাবনায়
ফিরে যাওয়ার
চেষ্টা করে।
কিন্তু থমকে
যায় সে।
এটার সাথে
আগের বিষয়টার
কেমন যেন
মিল পাওয়া
যাচ্ছে। হ্যাঁ,
ঠিক যেন
এখানের এই
সাধারণ পিঁপড়াগুলোর
মতই অবস্থা
হয়েছে আমাদের
সমাজের সাধারণ
ধর্মভীরু মানুষদের।
ইসলামের কথা
বলে কিছু
সংখ্যক মানুষ
বিশৃংখলা ও
আতঙ্কের সৃষ্টি
করছে আর
তাদের জন্যই
হয়রানীর শিকার
হচ্ছে সমাজের
প্রায় সকল
পর্যায়ের ইসলামী
ভাবাপন্ন ব্যক্তিবর্গ।
তারা কি
স্বার্থে এ
কাজ করেছে
তা তারাই
ভালো জানে
তবে এটা
নিশ্চিতভাবে বলা যায় তাদের এ
কর্ম ইসলামের
তো কোন
কাজে আসেনি
বরং ইসলামের
উপর একটা
কলঙ্ক লেপন
করেছে। ইমাম
সাহেবের বলা
ঘটনা সেটাই
প্রমাণ করে।
আবার মুক্তিযুদ্ধের
সময়ও ইসলামের
লেবাস পরা
সীমিত কিছু
সংখ্যক মানুষ
একান্তই তাদের
ব্যক্তিস্বার্থে সমর্থন করেছিল পাক হানাদার
বাহিনীদের। বর্তমানের প্রগতিবাদীরা তারই প্রভাব
ফেলছে ইসলামপন্থী
সমস্ত মানুষদের
উপর। এই
ইস্যুকে কেন্দ্র
করে কট্টর
সমালোচনারও শিকার হচ্ছে সুন্নতের উপর
আমল করা
অনেক ঈমানদার
মানুষ। এমনকি
ইসলামের উপর
চলার কারণে
তার নিজের
মতো যুদ্ধ
না দেখা
অল্প বয়স্কদেরও
এই কাতারে
দলভুক্ত করে
অনেকেই।
বর্হিঃবিশ্বে প্রতিনিয়ত দেখা
যাচ্ছে আল-কায়দা বা
তালেবান নামে
সনাক্ত করে
সাধারণ মুসলমানদের
ধরে ধরে
অমানবিক নির্যাতন
করা হচ্ছে।
তাদের পদতলে
নিষ্পেষিত হচ্ছে কত শত ধর্মপ্রাণ
মুসলমান ভাই-বোন। রাশেদ
তার নিজের
পায়ের চাপে
চূর্ণ বিচূর্ণ
হওয়া পিঁপড়াগুলোর
দিকে তাকিয়ে
যেন দেখতে
পাচ্ছিল সেই
সমস্ত মজলুম
মানুষদেরই প্রতিচ্ছবি। এগুলো যেন পিঁপড়া
নয়; ঐ
সমস্ত মানুষেরাই
যেন পিষ্ট
হওয়া দেহ
নিয়ে আপ্রাণ
চেষ্টা করে
যাচ্ছে ভাঙ্গা
মেরুদন্ডটা সোজা করে দাঁড়াতে। কিন্তু
পারছে না;
পড়ে যাচ্ছে
বার বার।
রাশেদের চোখজোড়া
বন্ধ হয়ে
আসছে। ওদিকে
তাকিয়ে থাকতে
কেন যেন
কষ্ট হচ্ছে
খুব।
###
(রচনাকাল- এপ্রিল, ২০১০)