আশ্রয়

.
সকাল থেকে অনেকবারই দরজা খুলে দেখা হয়েছে পত্রিকা দিয়ে গেছে কিনা। কিন্তু শেষবারও পত্রিকার দেখা পাওয়া গেল না। দশটা বেজে গেছে। সচরাচর ছেলেটা এত দেরী দেরি করে না।

পত্রিকা পড়ার প্রতি খুব বেশি নেশা নেই গফুর সেখের। সময় কাটানোর জন্য এর চেয়ে বিকল্প আর কোনো পথ খুঁজে পান না। তাই পড়তে পড়তে একটা টান তৈরী হয়েছে। পত্রিকা না থাকলে সময়টাও যেন যেতে চায় না। তবে দুপুরের পর থেকে সময়টা বেশ ভালো মত পার হতে থাকে। যোহরের নামাজ পড়ে বাসায় এসে খাওয়া সেরে একটু ঘুমিয়ে পড়লে উঠতে উঠতে আসরের নামাজের সময় চলে আসে। তারপর মুখ-হাত ধুয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। শারীরিক সমস্যা না হলে কোনো নামাজই তিনি বাড়িতে পড়েন না। জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত অনেক বেশি। তাছাড়া নামাজের আগে ইমাম সাহেব হাদিস কোরআন থেকে কিছু আলোচনা করেন। তাই তিনি না পারতে এটা মিস করেন না। বয়স বেড়ে গেছে তাই এগুলো ছাড়া অন্য কিছুতে ব্যস্ত থাকার প্রয়োজন পড়ে না।

তিন ছেলের কেউই এখন বাড়িতে থাকে না। চাকুরির সুবাদে তিন জনই বাইরে থাকে। এখানে থাকলে নাতি-নাতনীদের সাথে সময়টা ভালোভাবেই পার হয়ে যেত। ছেলেরা অবশ্য সব সময়ই বলে তাদের ওখানে গিয়ে থাকতে। কিন্তু তাঁর বাড়ী ছেড়ে কোথাও গিয়ে থাকতে ভালো লাগে না। তাছাড়া তিন তলা এই বাড়িটার ৩য় তলা ছাড়া বাকী দুই তলাই ভাড়া দেয়া থাকে। সে না থাকলে হয়তো বাড়িটার প্রতি অযত্ন হবে। আর ছেলেদের সংসারে গিয়ে তাদের বাড়তি ঝামেলাও তৈরী করতে চান না। এসব ভাবনা থেকেই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়া হয় না। তবে তার স্ত্রী আলেয়া বেগম মাঝে মধ্যে ছেলেদের ওখানে গিয়ে বেশ কিছু দিন করে থাকে। গত দেড় মাস আগে বড় ছেলের বাড়িতে গিয়েছিল, এখনো আসেনি। মূলত এরপর থেকেই নিঃসঙ্গতা শুরু হয়। হয়তো দুই/একদিনের মধ্যেই এসে পড়বে। আগামী পাঁচ তারিখে বড় ছেলে সেলিম সেখের একমাত্র সন্তান মুন-এর জন্মদিন বাড়িতেই করা হবে। দুই/এক দিন সময় থাকতেই তিন ভাই এক সাথেই এখানে চলে আসার কথা। পাঁচ তারিখ আসতে আর মাত্র চার দিন বাকী। আজ-কালের মধ্যেই ওরা সবাই হাজির হবে। খুব ভালো সময় কাটবে তখন।

দরজায় নক করার শব্দ শোনা গেল। এতক্ষণে হয়তো হকার ছেলেটা পত্রিকা নিয়ে এসেছে। তিনি উঠে এসে দরজা খুলে দেখলেন হকার ছেলেটা না, সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন মানুষ। তিনি চেনার চেষ্টা করেও চিনতে পারলেন না। অপরিচিত লোকটা বললেন যে, তিনি আমেরিকা থাকেন, তিনি এই বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলতে এসেছেন। নিচ তলার লোকজনের কাছে শুনেছেন মালিক ৩য় তলায় থাকেন তাই এখানে চলে এসেছেন। গফুর সেখ বললেনআমি এই বাড়ির মালিক, বলুন কি বলতে চান কথাটা শুনে লোকটার মধ্যে কেমন যেন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে জানতে চাইলেন, তিনি জানতেন জামাল উদ্দিন নামের একজন এই বাড়ির মালিক, গফুর সেখ তার কাছ থেকেই বাড়িটি কিনেছিলেন কিনা। তার উত্তরে গফুর সেখও জানালেন, বাড়িটি তিনি নিজে তৈরী করেননি, জামাল উদ্দিনের কাছ থেকেই কিনেছেন। কথাটা শুনে লোকটাকে চিন্তিত হতে দেখা গেল। গফুর সেখ যার কাছ থেকে বাড়িটি কিনেছেন সে এখন কোথায় থাকে জানতে চাইলে গফুর সেখ বললেন, তিনি এখন কোথায় থাকেন সেটা জানেন না। মালিককে তিনি কিভাবে চেনেন জানতে চাইলে লোকটি বলেন- সে তার দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়। অনেক বছর দেশের বাইরে থাকার কারণে তার সাথে দীর্র্ঘদিন যাব কোনো যোগাযোগ নেই। তিন দিন আগে দেশে এসেছেন। তাই এখন খোঁজ নিতে এসেছেন। গফুর সেখ লোকটিকে বসে বিশ্রাম নেয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বসতে চাইলেন না বরং গফুর সেখকে অহেতুক বিরক্ত করায় কিছু মনে না করার জন্য বলে বিদায় নিলেন। লোকটার চোখে-মুখে বিষণ্নতার ছাপ দেখা গেল। হয়তো প্রাক্তন মালিকের কাছে তাঁর খুব প্রয়োজন ছিল তাই প্রত্যাশিত এই জায়গাটিতে তাকে না পেয়ে হতাশ হলেন। হওয়াটাই স্বাভাবিক।

.
আসরের নামাজ পড়ে আসার পথে গফুর সেখ দূর থেকে খেয়াল করলেন তার বাসার কাজের মেয়ে রহিমার সাথে অপরিচিত দুইটা লোক কথা বলছে। গেটের কাছে একটা সাদা রং এর পিকআপ রাখা আছে। কাছাকাছি আসতেই মেয়েটা এদিকে তাকিয়ে বলল- “ যে খালু এসেছে লোক দু'টি ফিরে তাকায়। তাদের চোখে-মুখে কেমন যেন ক্লান্তিময় শোকের আভা। নীরবতায় কেটে গেল সামান্য কিছুক্ষণ। কিছু বলতে গিয়েও যেন বলতে পারছে না তারা। গফুর সেখ নিজেই জানতে চাইলেন তারা কার কাছে এসেছে। তারা তাঁর কাছেই এসেছে বলে জানায় কিন্তু কথাটা বলতে সাহস পাচ্ছে না। না বলেও উপায় নেই। শেষমেশ তারা জানায় যে, গফুর সেখের স্ত্রী, তিন ছেলে বউসহ এদেরই কোম্পানীর একটি মাইক্রোতে করে বাড়িতে আসার জন্য রওনা দিয়েছিল। কিন্তু সখিপুর ব্রিজ পার হওয়ার সময় পেছন থেকে একটি বাসের ধাক্কায় ব্রীজের রেলিং ভেঙ্গে মাইক্রোটি নদীতে পড়ে যায়। প্রায় তিন/চার ঘন্টা পর গাড়ীটি উদ্ধার করা হয়। ভিতরে আটকে পড়ার কারণে কোনো যাত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র ড্রাইভার কোন রকমে বের হতে পারলেও তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালে আছে।

গফুর সেখের চোখ-মুখ অন্ধকার হয়ে আসতে থাকে। তিনি ধুলার উপরেই বসে পড়লেন। লোক দুটি গফুর সেখকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। রহিমা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। কয়েক বছর ধরেই মেয়েটা এই সংসারে আছে। সবার উপর একটা মায়া তৈরী হয়েছে। সবাইকে ওর আপন বলেই মনে হয়। তাই মানসিকভাবে সে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। ছুটে যায় গাড়ীটার দিকে। কান্নার শব্দ শুনে ভাড়াটিয়া লোকজন বাইরে বেরিয়ে আসে। নিথর হয়ে বসে রইলেন গফুর সেখ। যেন কান্নাও ভুলে গেছেন।

প্রতিবেশী আরিফ সাহেব কার কাছে যেন খবরটা পেয়ে চলে এসেছেন। তিনিও যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। কোন রকম সান্ত্বনা স্বরূপ দু'একটা কথা বলে গাড়ীর কাছে চলে এসেছেন। গাড়ী থেকে লাশ নামানো হচ্ছে। প্রথমে নামানো লাশটার দিকে তাকিয়েই গফুর সেখের হৃদয়টা যেন মোচড় দিয়ে উঠলো। ছোট ছেলে নবীনের লাশ। যাকে তিনি ছোট বেলা থেকেই কোন কিছুতে হার মানতে দেখেননি। আজ সে পরাস্থ। তাঁর চোখে-মুখে যেন এখনও লেগে আছে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টার চিহ্ন। তিনি চেয়ে থাকতে পারছেন না যেন বুক ফেটে কষ্টগুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে। এবার বের করা হলো আদরের সোনামণি মুন এর লাশ। বাড়িটা যে মাতিয়ে রাখতো মজার মজার কথা বলে। আজ সে নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে আছে। আর কোনদিন সে মাতিয়ে তুলবে না এই বাড়ি। তিনি কোনদিনও ভাবেননি এমন একটি সময়ের মুখোমুখি হবেন। একে একে বড় ছেলে সেলিম মেঝ ছেলে জামিলের লাশও নামানো হলো। তিন ছেলের বউ তাঁর স্ত্রীর লাশ বের করে জন সম্মমুখে না রেখে ভিতরে রাখা হয়েছে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বাড়ীতে লোকজন ভরে গেছে। সবাই যেন শোকে মুহ্যমান। নিতলার ভাড়াটিয়া মামুন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন খুব কষ্ট করে কান্না চেপে ধরে রেখেছে। প্রায় পাঁচ বছর যাব বাড়ীতে ভাড়া থাকে। সেও আজ নিথর। তিনি ওর দিকে তাকাতেই কাছে এসে কাঁদো কাঁদো ভাবে জানায়- “সেলিম, জামিল নবীনের শ্বশুর বাড়ীতে খবর পাঠিযেছি। হয়তো এখনই এসে পড়বে

মাগরিবের আযান কানে আসতেই লোকজন চলে যেতে শুরু করে। ২য় তলা নীচ তলার ভাড়াটিয়া লোকগুলো তাকে ঘিরে আছে। মামুনের বউ এগিয়ে এসে বলে- "খালু আপনার এখন মসজিদে যাওয়ার দরকার নেই, বাসায় নামাজ পড়েন" মামুনের মত তার বউটাও গফুর সেখের উপর যথেষ্ট যত্নবান। মনে হয় যেন এরা ভাড়াটিয়া নয়; পরম আত্মীয়। গফুর সেখের পৈতৃক নিবাস এই এলাকায় না হওয়ায় এখানে তাঁর নিকট আত্মীয় বলতে তেমন কেউ নেই। তাই এদের দিয়েই তিনি সেই অভাব ভুলে থাকেন।


তিনি কোনদিন বসে নামাজ পড়েননি। আজই প্রথম বসা অবস্থায় নামাজ পড়লেন। দাঁড়িয়ে থাকার মত মনোবল যেন আজ হারিয়ে গেছে। সালাম ফিরানোর পর দেখলেন তিন ছেলের শ্বশুর বাড়ীর লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। নির্বাক সবাই। বড় ছেলের শ্বশুর আজমল সাহেব বুকের কষ্টকে চেপে রাখার চেষ্টা করলেও চোখের পানিকে ধরে রাখতে পারছেন না। গফুর সেখকে দেখে নিজে সংযত হওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ সে তার একটা মেয়েকে হারালো, আর গফুর সেখ পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন। সময় গড়াতে থাকে। তিনি গফুর সেখের কাছে এগিয়ে এসে বললেন- “আপনি যদি আপত্তি না করেন আমরা তিন বেয়াই তিন মেয়েকে আমাদের পারিবারিক গোরস্থানেই দাফন করতে চাচ্ছিলাম কথাটা শুনে খানিক্ষণ বেয়াইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন গফুর সেখ। এখানে তার পারিবারিক গোরস্থান নেই। পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে চাকুরির সুবাদে এখানে এসে এই বাড়িটাই কিনে বসতি করেছিলেন। নিজের স্ত্রী ছেলেদের লাশ দাফন করতে হবে স্থানীয় গোরস্থানে। তাই আর আপত্তি না করে ইশারা করে সম্মতিসূচক রায় দিলেন।

রাত ভারী হতে থাকায় ছেলেদের শ্বশুর বাড়ির লোকজন লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে। এই মুখগুলো আর কোনদিন দেখা যাবে না। কিছুক্ষণ পর তার ছেলেদের লাশও নিয়ে যাওয়া হবে দাফনের জন্য। আর কোনদিন দেখা যাবে না এই মায়াবী মুখগুলো। কয়েক মাস পর পর ছেলেদের পথ চেয়ে থাকতেন। আজকের পর থেকে তিনি আর কার জন্য পথ চেয়ে থাকবেন? রহিমা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। ওকে শান্ত করা যাচ্ছে না। তিনি তাকে পরম স্নেহে টেনে নিলেন বুকের কাছে।

.
বেলকনিতে ছোট্ট একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছেন গফুর সেখ। টবের ফুল গাছটার দিকে নজর করতেই দেখতে পেলেন গাছটা আগের মত তরতাজা নেই। থাকবে কী করে? রহিমাই এসব ঠিকমত পানি-টানি দিত, সেই দুর্ঘটনার পর থেকে আর আগের মত চঞ্চল নেই। রহিমাকে ডাক দিতে যাবেন ঠিক এমন সময় সে সামনে এসে বলেমামুন ভাইয়ের সাথে কি আপনার দেখা হয়েছে?” তিনি 'না' বলতেই সে বলে- "মামুন ভাইয়ের বউ বলেছে তার নাকি বদলী হয়েছে। আগামী মাসে চলে যেতে পারে।" কথাটা শুনে গফুর সেখের মনটা কেমন যেন হয়ে যায়। মামুন ছেলেটা খুব ভালো। কতদিন যাব এখানে ছিল। খুব মায়া আছে ওর মধ্যে। কয় বছরে কত উপকারই না করেছে। চলে গেলে খুব খারাপ লাগবে। ওকে কোনো সময় ভাড়াটিয়া মনে হয়নি, মনে হয়েছে কাছের কোন আত্মীয়। নিজের ছেলেদেরকে হারিয়েও তিনি অনেকটাই ভুলে ছিলেন মামুনকে পেয়ে। এটা মামুনও হয়তো আঁচ করতে পেরেছিল।

পরিবারের সকলকে হারিয়ে খুব নিঃসঙ্গ মনে হয় গফুর সেখের। তাঁকে বাকী জীবন একা একাই পার করতে হবে এটাই হয়তো ভাগ্যে লেখা ছিল। এই এলাকায় এসে শিক্ষকতা করার সুবাদে পৈতৃক সম্পত্তি আর চাকুরি জীবনের জমানো টাকা দিয়ে বাড়িটা কিনেছিলেন বলেই এখন এর ভাড়া দিয়ে ভালোভাবে চলা যাচ্ছে, নইলে কি যে হতো তা আল্লাই ভালো জানে। শুনেছিলেন ছেলেরা নাকি বাবা-মায়ের নামে ব্যাংকে একটা একাউন্ট করে টাকা জমা রাখতো। কিন্তু সেটা কোন ব্যাংকে, কোন শাখায় কত নম্বর একাউন্টে তার কিছুই তিনি জানেন না। নইলে হয়তো টাকাগুলো উঠানোর ব্যবস্থা করা যেত।

ছোট ছেলে নবীন কোন এক ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য তাঁর পেনশনের টাকাটা চেয়ে নিয়েছিল। বড় মেঝ ছেলের তাতে কোনো আপত্তি না থাকায় তিনিও কোনো আপত্তি করেননি। তাছাড়া নবীনকে তিনি ছোট বেলা থেকেই কোন আজে বাজে কাজের সাথে জড়াতে দেখেননি। তাই টাকাটা কোন ব্যবসাতে বিনিয়োগ করবে সেটা যাচাই বাছাই করারও প্রয়োজন মনে করেননি। সে টাকাটা কোন কাজে লাগিয়েছে জানা থাকলে হয়তোবা সেখান থেকে ফেরত পাওয়া যেত। যাহোক এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে। তাঁর তো বেশি খরচ নেই। একা মাত্র মানুষ, সাথে কাজের মেয়েটা। এই ছোট্ট সংসার চালানোর জন্য বাড়ি ভাড়ার টাকাগুলোই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি টাকার কোন প্রয়োজন নেই। সামনের বাকী 'টা দিন এতেই চলে যাবে।

.
পত্রিকাটা হাতে নিয়ে পড়ার চেষ্টা করছেন গফুর সেখ। ইদানিং পত্রিকা পড়তে বড্ড কষ্ট হয়। চশমার পাওয়ারফুল গ্লাসও মাঝে মাঝে এই ছোট ছোট অক্ষরগুলো ধরিয়ে দিয়ে ব্যর্থ হয়। তাই আর আগের মত পড়া হয় না। হঠা দরজার নক করার শব্দ শোনা যায়। রহিমা এসে দরজা খোলে। অপরিচিত একজন লোক। রহিমা আগে কোনদিন দেখেনি লোকটাকে। গফুর সেখ আছে কিনা জানতে চাইলে রহিমা বলে "আছে, ভিতরে আসেন" লোকটি ভিতরে ঢুকে সালাম দিয়ে বলে- "আমাকে চিনতে পেরেছেন?" গফুর সেখ তাকিয়ে আছেন লোকটার দিকে কিন্তু চিনতে পারছেন না। চিনতে পারছেন দেখে লোকটা নিজেই পরিচয় দিলেন তার নাম জামাল উদ্দিন। তিনি দুই মাস আগে একবার এসেছিলেন এই বাড়ির মালিক খোঁজ করতে। গফুর সেখ এবার চিনতে পেরেছেন। বললেন "আপনি কি তাকে খুঁজে পেয়েছিলেন?" জামাল উদ্দিন বললেন "তাকে পায়নি তবে আরো অনেক তথ্য পেয়েছি যেটা আপনার জন্য কষ্টকর তবু আমাকে বলতে হবে।" তিনি বলা শুরু করলেন। গফুর সেখ মনোযোগ দিয়ে শুনছেন তার কথা। এক পর্যায়ে খুব বিচলিত বোধ করলেন কথা গুলো শুনে। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না জামাল উদ্দিন কি বলছেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে যা বলেছেন তার সার কথা আসে এই জামাল উদ্দিনই এই বাড়ির প্রকৃত মালিক। তিনি বহুদিন ধরেই আমেরিকার বাসিন্দা। বাড়িটা দেখা শোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন আনোয়ার নামে স্বল্প পরিচিত এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের কাছে। শুরু থেকে ঠিকঠাক মত চালিয়েছে। প্রতি মাসের ভাড়াও ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে ঠিক মত জমা করেছে। কিন্তু তিন বছর পর আর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। আর এর মধ্যে তিনি দেশেও আসেননি। দুই মাস আগে দেশে এসে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন- সে ভূয়া মালিক সেজে জাল দলিল করে বাড়িটি বিক্রি করে পালিয়েছে। এই দুই মাসের মধ্যে তিনি প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র আবার একত্রিত করে হালনাগাদ করেছেন। তিনি যে এখনও এই জমি বাড়ির মালিক এবং তা কারো কাছে বিক্রি করেননি এর সকল প্রমাণ তার কাছে আছে।

গফুর সেখ জামাল উদ্দিনের কথা শুনে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলেন। তার পিছন দিকে দাঁড়িয়ে রহিমাও মনোযোগ দিয়ে শুনছিল তাঁর কথা। জামাল উদ্দিন জানতে চাইলেন এই বাড়ী কেনার সময় তিনি কোন আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছিলেন কিনা। গফুর সেখ জানালেন তিনি আইনজীবীর কথা বলেছিলেন কিন্তু তার আগেই সে একজন আইনজীবী এনেছিল এবং এমনভাবে দ্রুত সব কাজ গুছিয়ে এনেছিল যে, আলাদাভাবে আর কোনো আইনজীবীর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন মনে হয়নি। এটা শোনার পর জামাল উদ্দিন বললেনএটাও ছিল তার সাজানো। আমি এই দুই মাসে তাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। যাহোক আমি আমার বাড়িটা ফেরত নিতে চাই। ইন আমার পক্ষে আছে। আমি ইচ্ছে করলে এখনই অবৈধভাবে বাড়ি দখলের মামলা দিতে পারতাম। কিন্তু আমি আপনাকে সেই ভোগান্তিতে ফেলতে চাই না। আগামী তিন মাসের মধ্যে স্বেচ্ছায় বাড়িটি ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করছি। নতুবা তিন মাস পর আমাকে আইনের আশ্রয়ে যেতে হবে। তখন বাড়ি তো ছাড়তেই হবে সেই সাথে সাজাও হতে পারে। এমনকি এতদিন যাব বাড়ি ভাড়া বাবদ পাওয়া টাকাও ফেরত দেওয়ার চাপ আসতে পারে। স্বেচ্ছায় ছাড়লে ভোগান্তিগুলো আপনার উপর আসবে না। আর আমার এতক্ষণ বলা এই কথাগুলো যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে এই তিন মাসের মধ্যে আপনি আপনার কাগজপত্রগুলো নিয়ে ভূমি অফিসে ভালোভাবে খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে পারেন আপনার কাগজপত্রগুলো সঠিক আছে কিনা।"

গফুর সেখ যেন নির্বাক হয়ে যাচ্ছেন। মনে পড়ে একবার কর পরিশোধের রশিদে তাঁর এই তফসিল বর্ণিত জায়গাটির মালিকের নামের ওখানে জামাল উদ্দিনের নাম দেখেছিলেন। পরে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখবেন ভেবেছিলেন কিন্তু বিভিন্ন ঝামেলায় আর দেখা হয়নি এবং এক সময় তা ভুলেই গিয়েছিলেন। জামাল সাহেব চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। ছোট্ট একটা কাগজ গফুর সেখের হাতের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “এই কাগজটাতে ঠিকানা আছে, প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করতে পারবেন।বলেই সালাম দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। তার চলে যাওয়া পথের দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকেন গফুর সেখ রহিমা। যেন তাদের অতি মূল্যবান কিছু জিনিস যমদূতের মত ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে লোকটা। যেখানে শুধু চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই।

.

রহিমা খাবার দিয়ে গেছে অনেক্ষণ কিন্তু এখনো খেতে বসেননি গফুর সেখ। ইদানিং খাওয়া-দাওয়ার প্রতি যথেষ্ট উদাসীন হয়ে গেছেন। সারাদিনই শুধু জামাল উদ্দিন নামের লোকটার কথা মনে হয়। তার বেঁধে দেওয়া তিন মাস সময়ের মধ্যে বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেছে। কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসেও যাওয়া হয়নি। যাওয়ার মন মানসিকতাও নেই। লোকটা মনে হয় তার দিক থেকেই ঠিক আছে, নইলে হয়রানি করতে চাইলে এভাবে বলে কয়ে সময় দিত না। মামলা করেও তার বিদেশী টাকার কাছে পারা যাবে না। আবার এভাবে স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে দেওয়াও বোকামী। আর বাড়ি ছেড়ে দিলে তিনি উঠবেনই বা কোথায়? তার সম্পত্তি বলতে তো এই একটাই। ভেবে ভেবে কোন কূল কিনারা পাওয়া যায় না। গফুর সাহেরের মানসিক দুঃশ্চিন্তা রহিমার চোখ এড়ায় না। সেও ভেবে পায় না সময়টাতে তাকে কি বলা উচিত। তবু মনে সাহস সঞ্চার করে জানতে চায় "খালুজান লোকটা কি বাড়িটা নিয়েই নেবে?" গফুর সেখ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন- "জানি না রে।"

বাড়িটা যদি না থাকে তবে বৃদ্ধাশ্রম ছাড়া আর কোন গতি নেই। তাঁর এমন কোন আত্মীয় নেই যার কাছে থাকা যাবে। আর যুগে কে- বা কার বোঝা কাঁধে নেবে। অন্যের গলগ্রহ হয়ে থাকাও অসহ্য। ১০ কিলোমিটার দূরে কমলপুরে একটা বৃদ্ধাশ্রম আছে। শেষ পর্যন্ত হয়তো ওখানেই আশ্রয় নিতে হবে। গফুর সেখের কল্পনায় ভেসে উঠে বৃদ্ধাশ্রমের একটি ঘর, যেখানে তার মত অনেক বৃদ্ধরা আছে। সবাই বসে বসে জীবনের বাকী প্রহরগুলো গুনছে।

.

বৃদ্ধাশ্রমের সামনে দিকে বিভিন্ন রকম ফুলের গাছ লাগানো। তার পাশে বেশ বড় পরিসরে বসার ব্যবস্থা। বিকালের দিকে অনেকেই এখানটাতে এসে বসে। গফুর সেখের এখানটাতে বসতে ভালোই লাগে। তাই প্রতি দিনই তিনি বিকালের নির্মল বাতাসটুকু উপভোগ করতে এখানটাতে বসেন। তবে একা বসে থাকলে একটা সমস্যা হয়। ফেলে আসা জীবনের স্মৃতিগুলো মনের পর্দায় ভেসে উঠে। তখন খারাপ লাগে। তিনি কখনো ভাবেননি তাঁর সুন্দর জীবনটার শেষ পরিণতি এরকম হবে।

বৃদ্ধাশ্রমের তত্ত্বাবধানে থাকা মানুষগুলো মধ্যে একটা কিশোরী মেয়েকে দেখা যায়। তাকে পাওয়াও যায় এই বিকালের দিকে। অন্য সময়ে দেখা যায় না। তবে শুক্রবারে সারাদিন থাকে। মঝে মাঝে গফুর সেখের জানতে ইচ্ছে করে মেয়েটা এখানে কি জন্যে থাকে? তাকে দেখেও মনে হয় না যে, টাকার বিনিময়ে চাকুরি করে। জানতে ইচ্ছে করলেও কোনদিন তার কাছে শোনা হয়নি। একটু পরেই মেয়েটা এখানে পানি নিয়ে আসবে। ভাবনা জাগে, তার কাছে কি কথাটা শুনবেন আজ?

পানি ভরা প্লাস্টিকের জগটা সামনে রেখেই মেয়েটি পাশে বসে সে জানতে চায় গফুর সেখ কেমন আছেন। গফুর সেখ "ভালো আছি" বলে ইতস্তত করতে করতে জানতে চাইলেন সে এখানে চাকুরি করে কিনা। কথাটা শুনে মেয়েটি ছোট্ট একটি হাসি দিয়ে জানায় সে এখানে চাকুরি করে না, এটা তার বাবারই গড়া বৃদ্ধাশ্রম। সময় পেলেই সবাইকে দেখাশোনা করার জন্য আসে। সকালে স্কুলে যেতে হয় বলে আসতে পারে না। তাই বিকালে আসে। আর শুক্রবার ছুটি থাকায় বেশি সময় ধরে এখানে থাকতে পারে। গফুর সেখ বেশ অবাক হলেন এই ছোট্ট বয়সে মেয়েটার এমন মন মানসিকতা দেখে। মেয়েটির বাবাও মনে হয় খুব দয়ালু মানুষ। গফুর সেখ তাকে এখনও দেখেননি। শুধু শুনেছিলেন তার নাম মিজান তালুকদার। গফুর সেখ মেয়েটির কাছে আবারও জানতে চাইলেন সে কি এখানে নিজের ইচ্ছাতেই আসে নাকি তার বাবাই আসতে বলে। এই কথায় মেয়েটির জবাব শুনে তিনি অবাক হলেন। সে নাকি নিজের ইচ্ছাতেই আসে। এখানের এই বয়স্ক মানুষদের সেবা করতে নাকি তার ভালো লাগে। কথাটা শুনে তিনি খুশি হয়ে মনে মনে শুভকামনা করলেন। মেয়েটির নাম জানতে চাইলে সে বলে তার নাম কানিজ। তিনি বললেন- "বাহ্‌! তোমার নামের সাথে তোমার কাজের বেশ মিল আছে। তুমি কি তোমার নামের অর্থ জানো?" মেয়েটি মাথা নাড়ায়। তিনি বললেন কানিজ নামের অর্থ সেবিকা। তার বাবাই নামটা রেখেছেন কিনা জানতে চাইলে সে বলে তাঁর ধারণাই ঠিক। নামটি তার বাবাই রেখেছে। তার বাবা তাকে খুব আদর করে। গফুর সেখ বলেন "প্রত্যেক মা-বাবা- সন্তানদের খুব ভালোবাসে।" তাঁর কথা শুনে মেয়েটি বলে- "আমার বাবা প্রত্যেক বাবার মত না।" গফুর সেখের মনে কৌতূহল জাগে। তিনি জানতে চাইলেন- "তোমার বাবা আলাদা কিভাবে?" সে বলে অন্য বাবারা পরের সন্তানকে নিজের মত করে দেখে না। কিন্তু তার বাবা অন্যের সন্তানকেও নিজের সন্তানের মত আদর করেন। সে তার বাবার কাছে তেমনই একজন। সে তার বারার নিজের মেয়ে নয়। তাকে তার বাবা কুড়িযে এনেছিলেন। নিজের সন্তানের মতই আদর দিয়ে মানুষ করছেন। গফুর সেখ অবাক হন মেয়েটির কথা শুনে। সে আবারও বলতে থাকে- "আমাকে কোনদিন কোন সময় আপন বাবার অভাব বুঝতে দেননি। কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখেননি। আমার ক্লাসের বন্ধুদের দেখেছি তাদের নিজের বাবারাও যেটা তাদের না দেয় আমার এই বাবা আমাকে সেটা দেয়" মেয়েটির প্রতি বিহবল হয়ে পড়ছেন তিনি। বললেন- "তুমি এসব কথা কার কাছ থেকে শুনেছ?" মেয়েটি বলে- "আমার বাবার কাছ থেকে। তিনি নিজেই আমাকে বলেছেন। আর বলেছেন এগুলো আমার জানা থাকলে আশ্রয়হীন মানুষদের প্রতি আমার ভালোবাসা বাড়বে। আসলে তাই। আর ঐদিন থেকে আমি আমার বাবাকেও আরো বেশি বেশি ভালোবাসি" মেয়েটির কথাগুলো যেন তাকে অন্যরকম করে দিচ্ছে। স্মৃতিপটেও যেন কিছু একটা ভেসে উঠতে চাইছে। বললেন- "তুমি কি জানো তোমার বাবা তোমাকে কোথা থেকে নিয়ে এসেছিলেন?" সে বলে- "বেশি কিছু জানি না, শুনেছিলাম নিরালা আবাসিক এলাকার এক মসজিদের পাশের রাস্তা থেকে। আমি রাস্তার উপর পড়ে কাঁদছিলাম, সবাই আমাকে দেখে দেখে চলে যাচ্ছিল, সেই মুহূর্তে আমার এই বাবাই আমাকে কোলে তুলে এনেছিলেন" গফুর সেখ অপলকভাবে তাকিয়ে আছেন মেয়েটির দিকে। স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে চৌদ্দ বছর আগের সেই দিনের কথা। নিরালা আবাসিক এলাকায় তার বাড়ীর কাছে জামে মসজিদের রাস্তায় ড্রেনের পাশে সদ্যজাত সেই কন্যা শিশুটির ছবি। সে দিন নিজের সম্ভ্রমের কথা চিন্তা করে কোমলতি শিশুটিকে কোলে তুলে নিতে পারেননি। সম্মানহানি হবে ভেবেই পড়ে থাকা শিশুটির উপর ভালোবাসার হাত বাড়াননি। অথচ সে দিনের সেই শিশুটিই আজ সেবার ব্রুত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। সে দিন শিশুটির দরকার ছিল একটু ভালোবাসার পরশ; একটু মাথা গোজার ঠাই। যেটা এখন গফুর সেখেরই দরকার। সে সময় দোষ করলে তার বাবা-মা' করেছে তাঁর তো কোনো দোষ ছিল না। তিনি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকেন- তুমি তো জানো না মানুষ গড়ার কারিগর হয়েও সেদিন মানবতা বিসর্জন দিয়ে আমিও তোমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম।

গফুর সেখের অবচেতন মন বলে উঠে আমার মত গফুর সেখ একদিন বিলীন হয়ে যাবে কিন্তু কানিজের মত মেয়েরা এমনিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মাদার তেরেসার মতই অমর হয়ে থাকবে চিরকাল। "আপনার ওষুধ খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে" মেয়েটির কথায় সম্বিত ফিরে পান তিনি। তবু চেয়ে থাকেন মেয়েটির চোখের দিকে। তার চোখে কেমন যেন একটা মমতা দেখা যাচ্ছে, যে মমতা অসংখ্য অসহায় মানুষ দেখতে পেয়েছিল মাদার তেরেসা আর ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের চোখে।

(২০১১ ঈদ সংখ্যায় সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত)


------------------------------------------------

পুনশ্চঃ এই গল্পটা নবীন গল্পকার সোহেল রানা বীর-এর 'সম্ভ্রম' গল্পের পাঠ প্রতিক্রিয়ায় রচিত। উক্ত গল্পে গফুর সেখ রাস্তার পাশে পড়ে থাকা কান্নারত সদ্যজাত কন্যা শিশুর প্রতি কোনরকম মমতা না দেখিয়ে চলে এসেছিলেন। গল্পটিতে গফুর সেখকে একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে ফুটিয়ে তোলার পরও তিনি নিষ্পাপ শিশুকে আশ্রয় দিলে সম্ভ্রম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখে শিশুটির প্রতি কোনো মমতা দেখাননি। গল্পটি পাঠান্তে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল এমন একটি আশ্রয়হীন নিষ্পাপ শিশুটিকে আশ্রয়দান করলে আসলেই কি সম্ভ্রম নষ্ট হয়? আমার ধারণা এতে সম্মান ক্ষুণ্ন হয় না; বরং বাড়ে। তাই এই ভাবনাকে কেন্দ্র করেই এই গল্পটির অবতারণা।