নিজেকে সময় দেওয়ার
তেমন কোন
সময় হয়না
মাছুদার। আজ
হাতের নাগালে
আয়নাটা পাওয়ার
সুবাদে নিজের
চেহারাটা একবার
দেখা হলো।
দেখার পর
কেন যেন
মনে হচ্ছে
আগের তুলনায়
যথেষ্ট অবনতি
ঘটেছে। কেমন
যেন তেল
চিটচিটে আর
তামাটে বর্ণের
মত দেখাচ্ছে।
কোন এক
সময় রেডিওতে
শুনেছিল- রোদ
ত্বকের সৌন্দর্য
নষ্ট করে
ফেলে। শুনলেই
বা কী
হবে? দরিদ্র
পিতার খেতের
কাজে সাহায্য
না করলে
চলে না।
তাই রেডিওর
কথাটা শুধু
শোনাশুনিতেই সীমাবদ্ধ থাকলো; মানা সম্ভব
হয়নি কখনো।
বয়স বাড়া স্বত্ত্বেও
দ্বৈত জীবনে
আবদ্ধ হতে
না পারা
কোন মেয়ের
উপর গ্রাম্য
মানুষের কি
ধরনের মনোভাব
পড়ে তা
বছর কয়েক
আগেও ছিলো
তার ধারণার
বাইরে। এই
মনোভাব তাকে
বেশ বিস্বাদী
করে তোলে।
তার মত
এই বিস্বাদী
মনোভাবের শিকার
ছিল মিনুও।
গত সপ্তায়
ওর বিয়ে
হয়ে গেছে।
তবে একেবারে
সোজা সাপটায়
নয়; ছেলে
পক্ষকে হাজার
বিশেক দিতে
হয়েছে। তবুও
তো একটা
গতি। তার
বাবার তো
সে সামর্থও
নেই। বিয়ের
এ মাধ্যমটাকে
মাছুদা বরাবরই
ঘৃণার চোখে
দেখতো। কিন্তু
এখন আর
তার কাছে
তেমনটা মনে
হয় না।
কারণ, যেসব
মেয়েরা এ
বয়সে সেজে
গুজে স্কুল-কলেজে যাওয়ার
পরিবর্তে জীবিকার
তাগিদে মাঠে
মাঠে কাজ
করে নিজের
অনুজ্জ্বল সৌন্দর্যটুকুও রোদে পুড়িয়ে মানুষের
কাছে আকর্ষণহীন
হয়ে পড়ে
তাদের কাছে
এ মাধ্যমই
পতি বার্তা
বয়ে আনে।
তাই এখন
মাছুদা মনে
মনে এ
মাধ্যমটাকে ধন্যবাদও দেয়।
মিনু গতকাল বাবার
বাড়ি বেড়াতে
এসেই খবর
দিয়েছিল দেখা
করার জন্য।
কিন্তু এখনো
দেখা করা
হয়নি। বড়
রাস্তাটা পার
হলেই কয়েকটা
বাড়ির পর
মিনুদের বাড়ি।
মাছুদা মনস্থির
করে এখনই
যাওয়ার জন্য।
বাড়ির সরু পথটা
শেষ করে
বড় রাস্তার
উপর উঠতেই
চোখাচোখি হয়ে
যায় রমজান
ও শাহীনের
সাথে। পঁচিশ
ছোয়া দুই
যুবক। চোখে
চোখ পড়ে
যাওয়াকে কেন্দ্র
করে মাছুদার
মাঝে সামান্য
চমকানো ভাব
সহ মৃদু
হাসির রেশ
ফুটে উঠলো।
এটা কৃত্রিম
ছিল কি
না বোঝা
যায় না
তবে সেটা
যাইহোক এ
ধরনের ঘটনায়
সাধারণত বিপক্ষ
দিক থেকেও
মিষ্টি হাসির
উত্তর আসে।
মাছুদার ধারণা
ছিলো ব্যাপারটা
সেরকমই হবে।
কিন্তু সেটা
হলো না।
তারা স্বাভাবিক।
তাদের মানসিক
কোন পরিবর্তন
লক্ষ্য করা
গেল না।
শাহীনের মনে
তেমন কিছুর
সৃষ্টি না
হতেও পারে;
সে শহরে
পড়ে। মাছুদার
চেয়ে কত
ভালো ভালো
মেয়ে সে
দেখে থাকে।
কিন্তু রমজান
তো ওর
মত নয়;
রাজমিস্ত্রির সাথে যোগাড়ের কাজ করে,
সেই হিসেবে
এর জবাব
দেওয়াটা তার
কাছে খুব
বেশি অরুচিকর
নয়। নাকি
রমজানদের মত
ছেলেদের কাছেও
তার উচ্ছলতা
মূল্যহীন? ওরা অনেক দূর চলে
গেছে। মনে
রেখাপাত করলে
পিছন দিকে
একবার হলেও
ফিরে তাকানোর
সম্ভাবনা থাকে।
মাছুদা খেয়াল
করেছিল রমজান
সেটাও করেনি।
অবশ্য রমজানের
প্রতি সে
মানসিকভাবে দুর্বল নয়, তাই প্রত্যাশার
পরিধি বেশি
বাড়ানো হয়নি।
পরের দিন সকাল।
গতকাল ওদের
এমন অবহেলিত
দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে কী বা কারণ
থাকতে পারে
সেটা মাছুদাকে
একটু ভাবিয়েছে।
ভাবনান্তে ফলাফল দাঁড়ালো তার অনুজ্জ্বল
সুরত এবং
অগোছালো চাল-চলনই এর
জন্য দায়ী
হতে পারে।
এ ভাবনাকে
কেন্দ্র করে
দায়ের করা
সমস্যার সমাধানকল্পে
প্রতিদিনের কাজ গুলোর সাথে আজ
বাড়তি কিছু
কাজ করা
হয়েছে, যেগুলো
অন্যদিন করা
হয় না।
সুন্দর করে
চুল আঁচড়ানো
হয়েছে; তাতে
ক্লিপও লাগানো
হয়েছে। অবশ্য
চুলের ফিতাও
ছিলো কিন্তু
এখন ওটার
তেমন প্রচলন
নেই, কেমন
যেন সেকেলে
সেকেলে মনে
হয়। তাই
ওটা পরিহার
করে সে
স্থানে ক্লিপ
নামক এই
অধুনা জিনিসটাকে
প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পরনের পোশাকটার
মাঝে একটু
ভদ্রোচিত ভাব
আনার চেষ্টা
করলেও তেমনটা
হচ্ছে না,
অথচ তার
চেয়ে রঙে
চাপা মেয়েদেরও
সাধারণ বেশ-ভূষণে মানায়
ভালো। তারা
অবশ্য বেশির
ভাগই পড়ুয়া
বা বিভিন্ন
পরিবেশে ওঠা-বসা করা
মেয়ে। তবে
কি পরিবেশগত
প্রভাবে এমনটা
হয়ে থাকে?
হবে হয়তো।
তার তো
সে সুযোগ
নেই। আবার
ওসব মেয়েরা
বেশ ঘন
ঘন নিজেদের
পছন্দ ও
রুচিকে হাল
নাগাদ করে।
সেটাও মাসুদার
কাছে অসম্ভব,
কেননা এর
সাথে সামর্থের
ব্যাপার-স্যাপার
আছে।
আজ বড় কোন
প্রয়োজন ছাড়া
সে রোদে
যাওয়ার কথা
মাথায় আনবে
না, কেন
আনবে না
তা ওর
মা এখনও
জানে না।
শোনা-বোঝা
করলে তখন
তাকে একটু
বুঝানোর প্রয়োজন
হতে পারে।
তবে মাকে
বলার পর
তিনি কি
মেনে নেবেন?
নিতেও পারেন,
কেননা তিনিও
তো এক
সময় এ
বয়সটা অতিক্রম
করে এসেছেন।
মায়ের ভাবনাটা
মন থেকে
না সরাতেই
মায়ের কথা
কানে আসলো-
'কইরে মাছুদা!
কখন ভাতের
বাটি দিয়ে
গেলাম এখনো
ক্ষ্যাতে যাসনি?
তোর বাবা
একা একা
কাজ করতিছে
আর তুই
অত্ত বড়
সেয়ানা মেয়ে
হইয়ে.......।' বাকিটা অব্যক্ত
রেখেই তাকিয়ে
রইলেন মেয়ের
দিকে। মাছুদাও
নির্বাক। মাকে
বুঝানোর মত
মানসিকতা মাছুদার
থাকলেও মায়ের
তেজস্যি চেহারা
বলে দেয়
তা শোনার
মনোভাব তার
নেই। তাছাড়া
এখন তার
ভাবমূর্তি যেমন আছে এমন ভাবমূর্তি
থাকাকালে তিনি
এ ধরনের
কথায় কান
পাতেন না।
তাই এখন
কিছু বলাও
সমীচীন নয়।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে
তিনি বললেন-
'যাদের কাজ
না করলেও
চলে এসব
তারা করলে
মানায়'। কথাটা শুনে
ধাক্কা খাওয়ার
কথা। হলোও
তাই। মায়ের
কথাটা মাছুদাকে
নীরব করে
দেয়। সে
নীরবতার স্থায়ীত্ব
বাড়তে থাকে।
বাস্তবতা মানতে
হলে মায়ের
কথার সাথে
একমত হতে
হয়। এমনিতেই
সংসারের অবস্থা
খারাপ। কাজের
উপরই রুজি
নির্ভর। আর
তার মধ্যে
এসব উচ্ছ্বল
ভাবনাগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া কী ঠিক
হবে?
মায়ের কথাটা তাকে
চিন্তামুখী করে তোলে। কিছুক্ষণের চিন্তা-ভাবনায় যেটা
পাওয়া গেল
তাতে বাস্তবতার
কাছে উদ্ভূত
ভাবনাটাকে জেতানো সম্ভব হলো না।
তাই সে
ভারাক্রান্ত মনে শরীর থেকে জিনিস
গুলো খুলে
ছুড়তে থাকলো
বিছানার দিকে।
ফুরফুরে করা
চুল গুলোকে
নোটনে এঁটে,
ওড়নাটা মাজায়
পেঁচিয়ে, ভাতের
বাটিটা হাতে
নিয়ে অভ্যস্ত
কর্মীর বেশে
মাঠের দিকে
বেরিয়ে পড়লো।
বিছানার উপরই
ক্লিপ-আয়নার
সাথে মিশে
মুখ থুবড়ে
পড়ে থাকলো
তার আশামিশ্রিত
ভাবনাগুলো। সে ভাবনা আর কখনো
মাথাচাড়া দিয়ে
উঠতে পারবে
বলে মনে
হয়না।