১.
রাশেদ ভাইয়ার পিছে
পিছে হাঁটতে
রিফাতের একেবারেই
ভালো লাগছে
না। বড়
আম গাছটার
ছায়ায় এসে
রিফাতের চলার
গতি যেন
আরো থেমে
যায়। রাশেদ
ভাই পিছনে
তাকিয়ে বলে,
“এতো আস্তে
হাঁটলে তো
বাড়ি যেতে
সন্ধ্যা হয়ে
যাবে।” কথাটা
শুনে অনিচ্ছা
স্বত্তেও রিফাতকে
একটুখানি চলার
গতি বাড়াতে
হলো। রিফাতের
এখন খুব
ইচ্ছে হচ্ছে
পূর্ব পাশের
আম গাছটার
নিচে যেতে।
ক’দিন
আগে ওখানে
মৌমাছির আনাগোনা
দেখা গিয়েছিল।
এখন নিশ্চয়
মৌচাক তৈরী
করেছে। রাশেদ
ভাইয়া সাথে
না থাকলে
ভালো হতো।
ওনাকে বললে
যেতে তো
দেবেই না
উল্টো একগাদা
উপদেশ দিয়ে
দেবে। মৌচাকের
খোঁজখবর না
নিয়ে বাড়ি
যেতে রিফাতের
একেবারেই ভালো
লাগছে না।
রিফাত মথুরেশপুর প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে ক্লাশ টুতে পড়ে। সকালে
তার আব্বু
তাকে স্কুলে
দিয়ে যায়,
ছুটির পর
চাচাত ভাই
রাশেদ এসে
নিয়ে যায়।
এর আগে
অবশ্য রিফাত
একাই স্কুলে
আসা-যাওয়া
করতো। সে
সময় মৌচাক,
পাখির বাসা
দেখতে দেখতে
বাড়ি যাওয়া
যেত। কিন্তু
এখন আর
সেটা হয়
না, সাথে
গার্ড থাকে।
গার্ড থাকার
পেছনে অবশ্য
কারণ আছে।
ক’দিন
আগে রিফাতের
সহপাঠী রাব্বি
নিঁখোজ হয়।
সেদিন স্কুল
ছুটির পর
সবাই বাড়ি
ফিরলেও রাব্বি
বাড়ি ফেরেনি।
দিন যায়,
রাত যায়
রাব্বি আর
ফেরে না।
নিখোঁজ হওয়ার
এক সপ্তাহ
পার হওয়ার
পরও এখনো
পর্যন্ত রাব্বির
কোন খোঁজ
মেলেনি। এলাকার
মানুষ বলাবলি
করছে রাব্বিকে
ছেলেধরা নিয়ে
গেছে। রাব্বির
আম্মু কান্নাকাটি
করতে করতে
শয্যশায়ী হয়ে
গেছে। এ
ঘটনার পর
থেকেই রিফাতকে
একা স্কুলে
যাতায়াত করতে
দেয়া হয়
না। বিকালে
খেলার মাঠে
গেলে সেখানেও
রিফাতকে সতর্কতা
মেনে চলতে
হয়। আম্মু
বলে দিয়েছে
অপরিচিত কেউ
ডাকলে যাওয়া
যাবে না,
কিছু দিলে
খাওয়া যাবে
না। রিফাত
আম্মুকে জিজ্ঞেস
করেছিল, “খেলে
কি হবে?”
আম্মু বলেছিল,
“ছেলেধরারা যে খাবার দেয় তাতে
মেডিসিন মেশানো
থাকে, খেলে
অজ্ঞান হয়ে
যায়”।
মায়ের এসব
কথা রিফাতকে
যেন বেড়ি
পরিয়ে রেখেছে,
আগের মত
এখন আর
ইচ্ছেমত এখান
সেখান ঘুরতে
যাওয়া হয়
না।
হাঁটতে হাঁটতে রিফাত
তাদের বাড়ির
সামনে চলে
এসেছে। রাশেদ
ভাই রিফাতের
বইয়ের ব্যাগটা
দিয়ে বলে,
“যাও”।
রিফাত ব্যাগটা
নিয়ে তাদের
বাড়ির মধ্যে
ঢুকে পড়ে।
রিফাত বাড়ির
মধ্যে গেলে
রাশেদ ভাইয়া
চলে যায়।
২.
বারান্দার চৌকি খাটের
উপর রিফাত
শুয়ে আছে।
প্রতিদিন স্কুল
থেকে ফেরার
পর দুপুরের
খাবার খেয়ে
রিফাতকে আম্মুর
কথামত কিছুটা
সময় শুয়ে
থাকতে হয়।
রোদের তেজ
না কমা
পর্যন্ত বাইরে
যাওয়া নিষেধ।
তবে মাঝে
মধ্যে আম্মুর
চোখ ফাঁকি
দিয়ে বাইরে
যাওয়া চলে।
দরজার দিকে
নজর পড়তেই
আরিফকে বাড়ির
মধ্যে ঢুকতে
দেখা যায়।
আরিফ রিফাতের
খেলার সাথী।
যেদিন রিফাতের
মাঠে যেতে
দেরি হয়
সেদিন আরিফ
তার বাড়িতে
চলে আসে।
আরিফকে দেখে
রিফাত উঠে
বসে। আরিফ
রিফাতের খাটের
পাশে গিয়ে
এদিক ওদিক
একবার তাকায়,
তারপর আস্তে
আস্তে বলে,
“মিরাজদের বাবলা গাছে একটা শালিকের
বাসা দেখেছি,
ওর মধ্যে
বাচ্চা আছে
মনে হয়”। রিফাত
আশেপাশে একনজর
দেখে নেয়
তার আম্মু
আছে কি
না। এ
বিষয়ে আলাপ
করতে গেলে
সতর্কতা জরুরী।
না, আসে
পাশে আম্মুকে
দেখা যাচ্ছে
না। তারপরও
এ বিষয়ে
বাড়ির মধ্যে
আলাপ করা
নিরাপদ নয়
ভেবে রিফাত
আরিফকে বলে,
“বাইরে চল”।
বাড়ির বাইরে এসে
আরিফ আরো
জানায় সে
শালিক ছানার
ডাকও শুনতে
পেয়েছে। রিফাতের
কৌতুহল বাড়তে
থাকে। তার
খুব শখ
শালিক ছানা
পোষা। তার
মামাত ভাইয়ের
কাছ থেকে
একটা খাঁচা
এনেছিল সেই
কবে। এতদিন
পাখির ছানা
পাওয়া যায়নি।
আজ বোধহয়
শখটা পূরণ
হতে চলেছে।
রিফাতের পাখি
পোষার শখটা
আরিফ আগে
থেকেই জানে,
তাই তো
সে খবরটা
পৌঁছাতে দেরি
করেনি।
দু’জন হাঁটতে
থাকে পাখির
বাসার উদ্দেশ্যে।
মিরাজদের বাড়ির
দিকে রিফাতের
খুব বেশি
যাওয়া পড়ে
না। এ
কারণেই এই
বাসাটা তার
নজরে পড়েনি।
এ পাড়ার
কোথাও হলে
অবশ্যই তার
চোখে পড়তো।
তাদের এলাকায়
কোথাও নতুন
বাসা হলে
সেটা রিফাতের
চোখ ফাঁকি
দিতে পারে
না।
গাছের নিচে এসে
দাঁড়ায় দু’জন। রিফাত
গাছে ওঠায়
বেশ পটু।
তার সমবয়সীরা
কেউ তার
মত এত
দ্রুত গাছে
উঠতে পারে
না। কিছুদিন
আগে তার
মামাত ভাই
রাসেল ঢাকা
থেকে বেড়াতে
এসে রিফাতের
গাছে চড়া
আর সাঁতার
কাটা দেখে
খুব অবাক
হয়েছিল। সে
রিফাতের অনেক
বড়, সেভেনে
পড়ে। অথচ
সে এখনো
এসব পারে
না। রাসেলকে
পানি তুলে
গোসল করতে
দেখে রিফাত
খুব হেসেছিল।
রিফাতের হাসি
দেখে রাসেল
বলেছিল এবার
আসলে সে
সাঁতার না
শিখে ফিরে
যাবে না।
সতর্কতার জন্য রিফাত
গাছের নিচে
দাঁড়িয়ে আশেপাশে
একবার তাকায়।
কিছু দূরে
মিরাজের কাকাকে
দাঁড়িয়ে থাকতে
দেখা যায়।
উনাকে দেখে
রিফাত আরিফকে
বলে, “এখন
গাছে ওঠা
যাবে না,
মিরাজের কাকা
দাঁড়িয়ে আছে।
দেখলে গাছে
উঠতে দেবে
না, বকাবকি
করবে। চল
একটু পরে
আসি”।
আরিফ বলে,
“এখন আবার
কোথায় যাব?
এখানেই দাঁড়িয়ে
থাকি”।
রিফাত বলে,
“এখানে দাঁড়িয়ে
থাকলে উনি
এসে আমাদের
এখানে আসার
কারণ জানতে
চাইবে। এখান
থেকে চলে
যেতেও বলতে
পারে”।
কথাটা আরিফের
কাছে যুক্তিসঙ্গত
মনে হয়।
দু’জন
কিছু দূর
সরে আসে।
কিছুক্ষণ পর মিরাজের
কাকা বাড়ির
মধ্যে চলে
যায়। রিফাত
আর আরিফ
দূর থেকে
ফলো করছিল।
কাকা চলে
যেতেই ওরা
এগিয়ে আসে।
রিফাত দেরি
না করে
গাছে উঠে
গেল। গাছের
মগ ডালেই
বাসাটা। বাসার
কাছে গিয়ে
মুখ বাড়াতেই
তার মনটা
ভরে গেল।
একটা ছোট
ছানা, পাশে
গা ঘেসে
শুয়ে আছে
মা শালিক।
রিফাতকে দেখেই
মা শালিক
উড়ে গিয়ে
অন্য একটি
ডালে বসে
ডাকছে। রিফাত
পাখির ছানার
খবরটা আরিফকে
নিশ্চিত করে।
শুনে আরিফও
খুশি হয়।
রিফাত দ্রুত ছানা
নিয়ে নেমে
আসে। মা
শালিকটি জোরে
জোরে ডাকছে।
রিফাত ও
আরিফ কালবিলম্ব
না করে
বাড়ির দিকে
পা বাড়ায়।
মা শালিকটা
তাদের পিছু
পিছু ডাকতে
ডাকতে এগিয়ে
আসে।
বাড়ির মধ্যে এসে
রিফাত ছানাটা
আরিফের হাতে
দিয়ে ঘরের
মধ্য থেকে
খাঁচাটা বের
করে আনে।
বেশ ধুলো
পড়ে গেছে।
রিফাত ওটা
মুছে তার
মধ্যে ছানাটা
ঢুকিয়ে দেয়।
মা পাখিটা
রিফাতের বাড়ি
এসে তাদের
বরই গাছের
ডালে বসেছে।
কিছুক্ষণ পর
পর ডাকছে।
একটু পর রিফাতের
আম্মু আসে।
পাখির ছানা
দেখে জানতে
চান কোথা
থেকে আনা
হয়েছে। রিফাত
মিরাজদের বাড়ির
কথা জানায়।
তিনি শুনে
বলেন, “এতটুকু
বাচ্চা! এ
তো লালন
পালন করা
যাবে না,
মরে যাবে।
ওর মার
কাছে থাকলেই
ভালো হবে”। আম্মুর
কথায় রিফাতের
মনটা খারাপ
হয়ে যায়।
সে তার
আম্মুকে অভয়
দিয়ে বলে
যে, সে
বাচ্চাটাকে খুব যতœ করবে। পাখির
ছানা ফেরত
দেওয়ার কথা
বলতেই রিফাতের
মন খারাপের
ব্যাপারটা তার আম্মুর নজরে পড়ে।
তিনি আগে
থেকেই রিফাতের
পাখি পোষার
শখের কথা
জানতেন। দীর্ঘ
প্রতীক্ষার পর পাওয়া এই পাখির
ছানা রাখতে
না দিলে
রিফাত খুব
কষ্ট পাবে
ভেবে তিনি
আর জোর
করলেন না।
পাখির ছানার পরিচর্যা
করতে গিয়ে
আজ আর
রিফাতের খেলার
মাঠে যাওয়া
হলো না।
খাঁচাটা কোথায়
ঝুলিয়ে রাখলে
ভালো হবে,
বাচ্চাটাকে কি খাবার দেবে তাই
নিয়ে অস্থির।
মা পাখিটা
এখনও ফিরে
যায়নি। বরই
গাছ থেকে
এখন আমড়া
গাছের ডালে
এসে ডাকছে।
সন্ধ্যা বেলা পড়তে
বসে রিফাত
বার বার
খাঁচার কাছে
যায়। আজ
খুশিতে পড়ায়
যেন মন
বসে না।
রিফাতের মনে
পড়ে- পশ্চিম
পাড়ার মিন্টু
ভাই বহুদিন
থেকে পাখি
পোষে। ওনার
কাছে গেলে
লালন পালনের
পরামর্শ পাওয়া
যাবে। রিফাত
সিদ্ধান্ত নেয় আগামী কাল সকালেই
তার সাথে
দেখা করবে
।
রাতে শুয়ে শুধু
পাখির ছানার
কথা মনে
পড়ে তার।
খাঁচাটাকে আরো ভালোভাবে রাখতে হবে,
নইলে বিড়াল
আক্রমন করতে
পারে। পাখির
ছানা নিয়ে
ভাবতে ভাবতে
একসময় রিফাত
ঘুমের ঘোরে
হারিয়ে যায়।
বাড়ির অন্যান্য
সদস্যরা রিফাতের
আগেই ঘুমিয়ে
পড়েছে। মা
পাখিটা তখনও
আমড়া গাছের
ডালে বসে
কিছুক্ষণ পর
পর ডাকছে।
৩.
পরদিন বিকালে খেলার
মাঠের উদ্দেশ্যে বের হয় রিফাত।
সরু মাটির
রাস্তাটা পার
হলেই তাদের
মাঠ। আজ
রিফাত একটু
আগেই বের
হয়েছে। দেরীতে
গেলে মাঝে
মধ্যে দলে
ঢোকার সুযোগ
হারাতে হয়।
সরু রাস্তাটার
শেষ প্রান্তে
আসতেই রিফাত
খেয়াল করে
একটা মটর
সাইকেল আসছে।
চালকসহ দু’জন বসে
আছে। রিফাত
সরে দাঁড়িয়ে
ওদেরকে জায়গা
করে দেয়।
মটরসাইকেলটা রিফাতকে অবাক করে দিয়ে
তার সামনে
এসে দাঁড়ায়।
পেছনে বসে
থাকা লোকটা
বলে, “তোমার
নাম কি
খোকা?” রিফাত
তার নাম
বলে। লোকটা
যেন খুশি
হয়। “তোমার
আব্বার নাম
কি?” রিফাত
তার আব্বার
নামটাও বলে।
লোকটা খুশি
খুশি মুখ
করে বলে,
“আমরা মনে
মনে তোমাকেই
খুঁজছিলাম, আমরা তোমার মামা হই,
তোমাদের বাড়িতেই
যাচ্ছিলাম। অনেকদিন এদিকে আসিনি তো
তাই পথটা
চিনতে পারছিলাম
না। তোমার
সাথে দেখা
হয়ে ভালোই
হলো। এসো,
আমাদের সাথে
এসো”।
লোকটা তার
পকেট থেকে
একটা চকলেট
বের করে
রিফাতের হাতে
দিয়ে বলে,
“এটা মুখে
দিয়ে গাড়িতে
উঠে বস”। রিফাত
ইতস্তত করতে
করতে চকলেটটা
হাতে নেয়।
লোকটা নেমে
রিফাতের মাথায়
হাত বুলিয়ে
দিয়ে তাকে
কোলে তুলে
নিয়ে মটরসাইকেলে
বসিয়ে দিয়ে
বলে, “তোমাদের
বাড়ির পথ
কোনটা?” রিফাত
হাত দিয়ে
ইশারা করে
দেখিয়ে দেয়।
লোকটা রিফাতের
মাথায় হাত
বুলাতে বুলাতে
বলে, “অনেকদিন
পর তোমাদের
বাড়ি যাচ্ছি,
খালি হাতে
গেলে তো
হয় না,
ওদিকের দোকান
থেকে মিষ্টি
কিনে নিয়েই
তোমাদের বাড়ি
যাব”।
কথাটা বলতে
বলতে সে
রিফাতের হাতের
দিকে তাকায়।
চকলেটটা তখনও
রিফাতের হাতের
মধ্যে। “তুমি
এটা এখনও
হাতে করে
রেখেছ কেন?
খাও।” ততক্ষণে
মটরসাইকেল চলতে শুরু করেছে। রাস্তাটা
বেশি চওড়া
না হওয়ায়
মটরসাইকেল আস্তে আস্তে চলছে। রিফাত
এই প্রথম
মটরসাইকেলে উঠেছে, তাই ওর বেশ
ভালো লাগছে।
হঠাৎ
রিফাত তার
আম্মুর ডাক
শুনতে পায়।
সে ঘাড়
ঘুরিয়ে সেদিকে
তাকায়। তাদেরকে
বলে, “ঐ
যে আমার
আম্মু”।
ড্রাইভার লোকটা
সেদিকে একবার
তাকিয়ে মটরসাইকেলের
গতি আরো
বাড়িয়ে দেয়।
রিফাতের আম্মু
আবারও ডাক
দিয়ে মটরসাইকেল
থামাতে বলে।
মটরসাইকেল থামে না। এবার পেছনের
লোকটা রিফাতের
মুখে হাত
দিয়ে চেপে
ধরে ড্রাইভারকে
আরো জোরে
চালাতে বলে।
রিফাতের আম্মু
চিৎকার
করে, আশে
পাশে কোনো
মানুষ দেখা
যায় না।
রিফাতের আম্মু
পিছু পিছু
আসতে থাকে
কিন্তু বেশি
আগাতে পারে
না। রিফাত
চেষ্টা করেও
তার মুখ
থেকে লোকটার
হাত সরাতে
পারছে না।
হঠাৎ
তার মনে
পড়ে যায়
তার আম্মু
বলেছিল অপরিচিত
কেউ ডাকলে
যেন না
যায়, কিছু
দিলে যেন
না খায়।
তাহলে এরাই
কি সেই
ছেলেধরা? এজন্য
বোধহয় বার
বার চকলেট
খেতে বলছিল।
রিফাত তৎক্ষণাৎ চকলেটটা ছুড়ে ফেলে দেয়।
রিফাতের আম্মু যদিও
পেছনে পড়ে
গেছে তবু
চিৎকার
করতে করতে
ছুটে আসছে।
রিফাত শুনতে
পাচ্ছে পেছন
থেকে তার
আম্মুর কান্নাজড়িত
আওয়াজ। লোকটা
এক হাতে
রিফাতের মুখ,
আর অন্যহাতে
রিফাতকে শক্ত
করে ধরে
রেখেছে। রিফাত
আপ্রাণ চেষ্টা
করছে ছাড়িয়ে
নিতে, কিন্তু
সে চেষ্টা
ব্যর্থ হচ্ছে।
একটা ঝাকুনিতে হঠাৎ রিফাতের
চেতনা হয়।
চোখ খুলে
দেখে তার
আম্মু তার
হাত ধরে
রেখেছে। চারপাশে
ভোরের নতুন
আলো ঝলমল
করছে। আম্মু
বলেন, “কী
হয়েছে? এমন
করছিস কেন?”
রিফাত কিছু
বলতে পারে
না। সে
অপলক তার
আম্মুর দিকে
তাকিয়ে থাকে।
আম্মুকে ছেড়ে
থাকার কথা
সে ভাবতেই
পারে না।
হঠাৎ
কানে আসে
সেই মা
পাখিটার ডাক।
রিফাত ছুটে
বাইরে আসে।
মা পাখিটা
এখনও আমড়া
গাছের ডালে
বসে আছে।
রিফাত মা
পাখিটার দিকে
তাকিয়ে অবাক
হয়। ওকে
দেখে যেন
কিছু একটা
মনে পড়ছে।
হ্যাঁ, মনে
পড়েছে। কিছুক্ষণ
আগে স্বপ্নের
মধ্যে তার
জন্য তার
মায়ের কাঁদো
কাঁদো কণ্ঠের
ডাক আর
এই মা
পাখির ছানার
জন্য এই
ডাকের মধ্যে
যেন গভীর
মিল। রিফাতের
ভাবনা গভীর
হতে থাকে।
রিফাত খাঁচাটার কাছে
এগিয়ে যায়।
খাঁচার মুখ
খুলে ছানাটা
বের করে।
তারপর রিফাত
ছানাটাকে আম্মুর
কাছে নিয়ে
বলে, “ছেলেধরা
রাব্বিকে নিয়ে
যাওয়ার পর
রাব্বির আম্মুর
যেমন কষ্ট
হচ্ছে এই
ছানাটার জন্য
কি ঐ
মা মাখিটার
তেমন কষ্ট
হচ্ছে?” রিফাতের
কথা শুনে
তার আম্মু
আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। দু’হাতে
রিফাতকে জাড়িয়ে
ধরে কপালে
চুমু দেয়।
অদূরে আমড়া
গাছের ডালে
মা পাখিটা
তাদের দিকেই
তাকিয়ে আছে।