এক.
চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার সময় জামাল উদ্দিনের
চোখ যায় আনিছুরের দিকে। আনিছুর আড় চোখে চেয়ে ছিল এদিকে। চোখাচোখি হতেই সে চোখ নামিয়ে অন্য কাজে মনোযোগী হওয়ার ভাব করে। আনিছুর কোনো কিছু বলতে চাইলে আগে বসদের মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে। যদি দেখে মন মেজাজ ভালো তাহলে আশে পাশে ঘুর ঘুর করতে করতে এক সময় বলেই ফেলে কথাটা। আজও সেরকম একটা কিছু হবে বলেই মনে হচ্ছে জামাল সাহেবের কাছে।
জামাল উদ্দিন খেয়াল করেছেন আনিছুর এই অফিসের
পিয়ন হলেও তার মধ্যে বাড়তি কিছু যোগ্যতা আছে। আনিছুর অফিসে যোগদান করার পর প্রথম যেদিন তিনি আনিছুরকে বলেছিলেন- সুন্দর করে একটা
চা করে নিয়ে এসো তো। কথাটা শুনে সে বলেছিল- স্যার, সুন্দর করে চা বানানোর জন্য আপনাকে অন্তত এক-দুইবার চা খাওয়ানো
লাগবে। তারপরই চা সুন্দর হবে।
বসদের সাথে সচরাচর পিয়নরা এভাবে কথা বলে না। জামাল উদ্দিন তার কথাটা শুনে বেশ অবাকই হয়েছিলেন।
- ভালো করে চা বানাতে জানলে এক-দুইবার খাওয়ানো
লাগবে কেন?
- স্যার, ভালো বা সুন্দর এটা আসলে একেক জনের কাছে একেক রকম। এই যেমন মনে করেন আপনি চায়ে দুধ বেশি খান। আপনার জন্য যদি দুধ কম দিয়ে চা বানিয়ে আনি তাহলে সেটা আপনার কাছে মোটেও সুন্দর
চা হবে না, আবার যিনি চায়ে কম দুধ খেতে পছন্দ করেন তার
আছে এটাই হবে সুন্দর চা। চায়ে চিনির ব্যাপারটা
একই রকম।
- তা অবশ্য মন্দ বলনি কথাটা।
- স্যার, অনুমতি দিলে আরেকটা উদাহরণ দিতে পারি।
- উদাহরণ! কিসের?
- সুন্দরের।
- আচ্ছা, বল।
- স্যার, মনে করেন আপনি রহমত আলী স্যারকে বললেন- কম্পিউটারে সুন্দর একটা গান প্লে করেন। আপনার যদি ভারতীয় আধুনিক বাংলা গান অথবা এই টাইপের গানগুলোই প্রিয় হয়ে থাকে আর
রহমত স্যার যদি "তেরি মেরি" নামক জনপ্রিয় হিন্দি গানটা প্লে করে দেয় তাহলে
এটা আপনার কাছে মোটেও সুন্দর মনে হবে না। অথচ স্যার আপনার কলেজ
পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের কাছে ঐ বাংলা গানটা পচা গান আর হিন্দি গানটাই সুন্দর গান মনে হবে।
- আমার ছোট ভাই আছে কিনা তুমি কেমনে জানলে?
- জানি না স্যার, এমতিই বললাম। এই বয়সের ছেলেরা এসব পছন্দ করে তো তাই।
আনিছুরের এ সমস্ত কথা শুনে সেদিন জামাল উদ্দিনের
মনে হয়েছিল আনিছুরের রুটিনের যে কাজ আছে তার উপরের কিছু কাজও তাকে দিয়ে করানো যাবে। এই ধারণা বৃথা যায়নি। এ্যসিসট্যান্ট ডিরেক্টর
কিংবা কো-অর্ডিনেটরদের কেউ ছুটিতে থাকলে সেসময়টাতে আনিছুরকে দিয়ে তাদের নরমাল কাজগুলো
এগিয়ে নেয়া যায়।
চা শেষ করে কাপটা পিরিচের উপর রাখতেই আনিছুর
এগিয়ে আসে ওগুলো নিয়ে যেতে। পিরিচটা হাতে তুলে
নিতে নিতে বলে- স্যার, প্রেস থেকে অনেকগুলো
পোস্টার দিয়ে গেছে। ওগুলো কি দেয়ালে দেয়ালে লাগাতে হবে?
- হ্যা, "বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস"এর এই পোস্টারগুলো কাল পরশুর মধ্যেই লাগাতে হবে। আমিও সাথে থাকবো। কোন কোন জায়গায় লাগাতে হবে দেখিয়ে দেব।
স্যারের কাছ থেকে এরকমই একটা উত্তর আশা করেছিল
আনিছুর। স্যারের কথাটা শুনে যেন প্রশান্তির রেখা ভেসে ওঠে তার চোখে-মুখে। কোনো সেমিনার কিংবা বিশেষ দিবসে অফিসের বাইরে কোন কাজ করলে জামাল স্যার তাকে কিছুটা
হাত খরচ দেন। এই টাকাটা মাসিক হিসাবের বাইরে থাকায় তা দিয়ে
বাড়তি প্রয়োজনটুকু মেটানো যায়। যদিও পোস্টারগুলো লাগানোর
পরেই টাকাটা পাওয়া যাবে তারপরও অগ্রীম টাকা পাওয়ার এই সম্ভাবনার কথাটা শুনেই তার মনের
ভিতরটায় একটা খুশির আবহের সৃষ্টি হয়। সেই আবহের রেশ তার
চেহারায়ও ফুটে ওঠে।
দুই.
প্রতিদিনের সঙ্গী ময়লা বস্তটা পিঠের উপর নিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে সাগর সামনে দিকে খেয়াল করে একজন লোক একটি ফ্রুটো খেতে খেতে যাচ্ছে। এক দু’পা হাঁটছে আর বোতলটা উচু করে একটু একটু করে
মুখে ঢেলে দিচ্ছে। লোকটার পিছু নিলে খালি বোতলটা পাওয়া যেতে
পারে। আর যদি সে একটু দয়াবান টাইপের হয় তবে বোতলের নিচের দিকে কিছুটা
রেখে বোতলটাসহ দিতে পারে। সাগর তার পিঠের বস্তাটা
হেচকা টান দিয়ে উপরের দিকে তুলে নিয়ে লোকটার পিছে পিছে হাঁটতে থাকে। সাগর বার বার বোতলটার দিকে তাকাচ্ছে। লোকটা পিছে তাকিয়ে
সাগরকে দেখলেও তার মনে কোনো দয়ার উদ্রেগ হয়েছে বলে মনে হলো না। সাগর হেঁটেই চলেছে লোকটার পিছে পিছে।
সাগর ভেবে নিয়েছে লোকটা বোতলে আমের রস সহ
তাকে দিলেও সে নিজে খাবে না। গতকাল একজন আরসি লেমন
খেতে খেতে বোতলের নিচে কিছুটা রেখে বোতলটা সাগরকে দিয়েছিল। পরম তৃপ্তি নিয়ে সেটা খাওয়ার পর ছোট বোনটার কথা মনে হতেই খুব খারাপ লেগেছিল। বোনটা একা একা বাসাতেই থাকে। মা অন্যের বাসায় কাজ
করতে যায়, সেখানে ছোট বাচ্চা নিয়ে যাওয়া নিষেধ আছে। সাগরের বাবা ইসমাইল হোসেন নিরুদ্দেশ হওয়ার পর থেকেই তার মাকে বুয়ার কাজ করতে হয়। সে কাসেম বেপারীর কনস্ট্রাকশনে লেবারের কাজ করতো। কয়েক মাস আগে থেকেই সংসারে তেমন খরচ-পাতি দিত না। এ নিয়ে তার মায়ের সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো। তারপর একদিন কাজে বের
হয়ে আর ঘরে ফেরেনি। যেখানে কাজ করতো সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা
যায় সে সেখানেও যায় না। পরে আরো খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় ওখানেরই সালেহা
নামে এক মহিলা শ্রমিকের সাথে তার নাকি একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তারা আরো জানায় ইসমাইল সালেহাকে বিয়েও করেছে। এখন তারা দুজনই অন্য জায়গায় কাজ করে।
বাবা সংসারে থাকাকলীন সময়ে সাগর স্কুলে যেত। কিন্তু বাবা উধাও হওয়ার পর তার মা অন্যের বাসায় কাজ করে কোনো রকমে দুই সন্তান নিয়ে
সংসার চালাতে পারলেও সাগরের পড়ালেখার জন্য খরচ বের করতে না পারায় তাকে পড়ালেখার জন্য
তাগিদ দেয় না। আর এটাই যেন সাগরের জন্য সুখবার্তা বয়ে নিয়ে
আসে। স্কুলে যেতে হয় না। বাসা থেকে পড়া শিখে
না গেলে স্যারের ধমক খেতে হত, সেটাও আর হয় না। ছুটির জন্য আগের মত শুক্রবারের অপেক্ষা করা লাগে না; প্রতিদিনই শুক্রবার। স্কুলে যাওয়া বন্ধ
হওয়ার পর বাসাতেই সময় কাটতো, পরে একদিন মনে হলো
মহল্লার অনেক পোলাপান তো ছোটখাট একটা বস্তা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল, পুরাতন জিনিসপত্র পেলে সেগুলো বস্তির কোনায় কাল্লু মিয়ার ভাঙ্গারির দোকানে দিয়ে
কিছু টাকা পায়। শুধু শুধু বাসায় বসে না থেকে এটা করলেও তো
ক'টা টাকা পাওয়া যাবে। ব্যস, ভাবনা মতই কাজ শুরু হয়েছিল, এখনও পর্যন্ত তা অব্যাহত আছে।
মাঝে মধ্যে কেউ কেউ দুই এক টাকা করে দেয়। সাগর সেগুলো মায়ের কাছে জমা দেয়। তবে জমা দেওয়ার সময়
তার মাকে শর্তে রাজি হতে হয়েছে। শর্ত ছিল- এই টাকা
সংসারে খরচ করলে হবে না। ঈদের সময় তাকে নতুন
শার্ট কিনে দিতে হবে। মা রাজী হয়েছিল সেই শর্তে। তবে সে যখন মায়ের কাছে টাকা দিচ্ছিল তখন তার মা শাড়ীর আঁচল দিয়ে কেন চোখটা বার
বার মুছছিল জিজ্ঞেস করেও তার জবাব পাওয়া যায়নি।
লোকটা হেঁটেই চলেছে, সাগর তার পিছে। অবশেষে সে বোতলটা একেবারে
খালি করেই ফেলে দিল। ছোট বনের জন্য আর নেয়া হলো না। সাগর বোতলটা কুড়িয়ে নিয়ে বস্তার মধ্যে রাখতে রাখতে তার চোখ যায় পাশের দেয়ালটার
দিকে। বড় বড় অনেকগুলো রঙিন পোস্টার লাগানো। সম্ভবত গতকাল রাতেই এগুলো লাগানো হয়েছে। পোস্টারগুলো বেশ মোটা
কাগজের বলেই মনে হচ্ছে। পাতলা কাগজের পোস্টার তুলতে গেলেই ছিড়ে যায়। এগুলো সহজে তোলা যাবে বলেই মনে হচ্ছে। এ সমস্ত কাগজ একটু
আধটু ছেড়া থাকলেও বস্তা বেশি ভারী হয় না, কিন্তু কোনো
দোকানের ঝুড়ি থেকে বাতিল কাগজ নিতে গেলেই দোকানী ব্যাটা বলে- "নিলে পুরা ঝুড়ি
উপুড় করে নিতে হবে। শুধু কাগজ নিলে হবে না"। বাধ্য হয়েই কাগজের সাথে কলার ছোবড়ার মত অকেজো ভারী জিনিস বস্তায় ভরে বয়ে বেড়াতে
হয়।
সাগর ধীরে ধীরে দেয়াল থেকে কিছু ছেড়া-ফাটা
এবং কিছু অক্ষত পোস্টার তুলতে সক্ষম হয়। তারপর সেগুলো বস্তায়
ভরে আবার ঘরের পথ ধরে। বর্ষাকালে খুব বেশি কাগজ পাওয়া যায় না। বৃষ্টি হলে রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজগুলো সব ড্রেনে চলে যায়। তাই ছেড়া ফাটা কাগজগুলোও নিতে হয়। পিঠের বস্তাটা আরেকবার
হেচকা টান দিয়ে উপরের দিকে নিয়ে সাগর আবার হাঁটা শুরু করে।
তিন.
বৃদ্ধ রমিজ আলী প্রতিদিন রাস্তার ধারে দেয়ালের
পাশ ঘেষে একটা জায়গায় বসে ভিক্ষা করে। প্রতিদিন এই রাস্তা
দিয়ে বহু লোক চলাচল করলেও স্থায়ীভাবে কাউকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় না। অথচ আজ সকাল সে একজন ভদ্রলোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে। মনে হয় কারো জন্য অপেক্ষা করছে। কারো জন্য অপেক্ষা
করলে এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ফোনে কথা বললেই তো হয়। এখন তো মোবাইলের যুগ। তার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে
হচ্ছিল যে, তিনি এখানে এভাবে কেন দাঁড়িয়ে আছে?
কিন্তু এই কথা শুনে বিরক্ত হয়ে যদি বলে- আমি কেন দাঁড়িয়ে আছি
তা জেনে আপনার দরকার কি? তখন তো বলার কিছু থাকবে
না। তার চেয়ে কিছু না বলাই ভালো, সে যা ইচ্ছে তাই করুক। এতে মাথা না ঘামালেও
চলবে।
বৃদ্ধ রমিজ উদ্দিনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে লোকটা
তার দিকেই এগিয়ে আসলেন। সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন- চাচা এখানে কি টোকাই
পোলাপান আসে?
- আসে তো। তা বাবা টোকাই দিয়া তুমি কি করবা?
- সাইজ করবো।
বৃদ্ধ রমিজ উদ্দিন কথাটা বুঝলো না। যদি একটু ব্যাখ্যা করে বলে এই আশায় তার মুখে দিকে চেয়ে রইলো।
বৃদ্ধের নির্বাক চাহনী দেখে তিনি বুঝলেন বৃদ্ধ
তার কথাটা বোঝেনি। তিনি বললেন- বহু টাকা খরচ করে পোস্টার ছাপিয়ে
দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছি। আর ঐ হারামজাদা ছিড়ে
নিয়ে গেছে।
আজ হাতের কাছে পেলে ইচ্ছেমত সাইজ করবো।
বৃদ্ধ এবার কিছুটা হলেও বুঝতে সক্ষম হয়েছে
লোকটা সাইজ বলতে কি বুঝিয়েছেন।
- কিসের পোস্টার লাগাইছিলা বাবা?
- "শিশু অধিকার দিবস"এর পোস্টার। শিশু বিষয়ক আমার একটা সংস্থা আছে। আমি তার নির্বাহী পরিচালক। বঞ্চিত শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা কাজ করি। সমাজের অবহেলিত, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মৌলিক অধিকারগুলো পাওয়ার
ব্যবস্থা করি। সামনে "বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস"
আসছে, সেই উপলক্ষে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য বহু টাকা
খরচ করে পোস্টার ছাপিয়ে গতকাল আমার পিয়নকে দিয়ে মহল্লার বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়েছি। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ পোস্টারগুলো কি না ঐ হারামজাদা টোকাইয়ের বাচ্চা ছিড়ে নিয়ে
গেল! মেজাজটা কেমন লাগে বলেন তো চাচা? আজ আবারও এখানে
কিছু পোস্টার লাগিয়েছি। দেখবো কোন বদমাস আসে। যেটারে পোস্টার ছিড়তে দেখবো ধরে এমন পিটানি দেব যে, জীবনে আর পোস্টার ছেড়ার নাম মুখে আনবে না।
লোকটার কথাগুলো এতক্ষণ বৃদ্ধ অবাক হয়ে শুনছিল। কিছুক্ষণ নীরবে আপন মনে কি যেন ভাবলো, তারপর বললো-
বাবা আমি একটা কথা বলবো?
- বলেন।
- তুমি ঐ যে সঙিস্থা না কি যেন করতাছো এসব না
কইরা ব্যবসা ট্যাবসা করলে মনে হয় ভালো করতা?
- এ কথা কেন বললেন?
- ব্যবসা-বাণিজ্যে টাকা বেশি। তুমি যদি ব্যবসা করতা তাইলে আর এইহানে কোনো পোস্টার লাগাইতে হইতো না। পকেটেও বেশ টাহা-পয়সা থাকতো। তা থেইকা আমার থালায়
দুইটা টাকা দিয়া এতক্ষণে চইলা যাইতে পারতা।
কথাটা বলার সময় কিছুটা হাসির রেশ ছিল তার
চোখ-মুখে। কথাটা শুনে জামাল উদ্দিন কিছুটা বিরক্ত হয়।
- আসলে চাচা আপনারা চেনেন শুধু টাকা। সব প্রতিষ্ঠান টাকার জন্য হয় না। আমার সংস্থা দেশ ও
জাতির উন্নয়নে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর একটা সুন্দর লক্ষ ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এসব আপনাকে বুঝিয়ে
লাভ নেই। আপনারা চেনেন শুধু টাকা। টাকা ছাড়া আর কিছু বোঝেন না।
- ঠিকই কইছো বাবা, আমরা অনেক কিছুই বুঝি না।
বৃদ্ধের হাসির রেশটা এখনও আছে। সেটা জামাল উদ্দিনের চোখ এড়ায়নি। বৃদ্ধের ঐ হাসির রেখাই
যেন বলে দিচ্ছে তার কথার পেছনে অন্য কোনো ইঙ্গিত আছে। জামাল উদ্দিন কিছুক্ষণ নীরব থেকে সেই ইঙ্গিত খোঁজার চেষ্টা করলেন, কিন্তু বের করতে পারলেন না।
- আচ্ছা চাচা সত্যি করে বলুন তো আপনি আমাকে
সংস্থার কাজ না করে ব্যবসা করতে বললেন কেন?
- বাবা, আমরা রাস্তার মানুষ, জগতের অনেক কিছুই বুঝি
না। তুমি একবার নিজের থাইকা ভাইবা দ্যাখ তো, তুমি যে লইক্ষ না উদ্দেশ্যের কথা কইতাছ সেইটা তুমি ঠিকমত করতে
পারতাছো কি না?
বৃদ্ধের এই কথাটা আবারও জামাল উদ্দিনের বিরক্তির
কারণ হলো। তিন বছর ধরে তিনি সংস্থাটা সুন্দরভাবে পরিচালনা করছেন আর এই
বৃদ্ধ আজ জিজ্ঞেস করে- উদ্দেশ্য মাফিক কাজ করতে পারছি কি না। বৃদ্ধের এই অবান্তর কথার প্রেক্ষিতে কি বলা যায় সেটা ভাবতে ভাবতে জামাল উদ্দিন
খেয়াল করে একটা টোকাই বস্তা পিঠে নিয়ে সেই দেয়ালটার দিকে এগিয়ে আসছে। বৃদ্ধ ভিক্ষুক কি বললো না বললো সেটা নিয়ে এখন আর জামাল উদ্দিন মোটেও ভাবতে চান
না, ভাবার প্রয়োজনও নেই। এতক্ষণের অপেক্ষর অবসান
ঘটতে চলেছে। টোকাই ছেলেটা আরো এগিয়ে আসতে থাকে। জামাল উদ্দিন ছেলেটার গতিপথ লক্ষ্য করছেন। বৃদ্ধ লোকটা ছেলেটাকে আসতে দেখে কেমন যেন আতকে উঠে। অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকে তার দিকে। বৃদ্ধের অবচেতন মনটা
যেন ছেলেটাকে সতর্ক করার জন্য বলছে- তুই এদিকে আসিস না, আর এক পা'ও সামনে বাড়াস না। কিন্তু তার সেই আকুতি মনের মধ্যেই আটকা থাকে; টোকাইয়ের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।
# # #