চেষ্টা

\ ১ \
ঘরের মধ্যে সাজ্জাদুলকে ঢুকতে দেখেই অহিদুল কেমন যেন হয়ে যায়। মেহমানদের দিকে এক নজর তাকিয়ে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তার চাচা মোবারক হোসেনকে মেহমানদের সাথে কথপোকথন চালিয়ে যাওয়ার ইশারা করে সে সাজ্জাদুলের দিকে এগিয়ে যায়। সাজ্জাদুলের কাছে গিয়ে তার হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। মোবারক হোসেন খেয়াল করেন মেহমানরা সেদিকেই তাকিয়ে আছে। তিনি মেহমানদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন, ‘‘পাত্রের কোনো দাবী-দাওয়া নেই জেনে ভালো লাগলো।’’
মোবারক হোসেনের কথায় সঙ্গতি রেখে মেহমানদের মধ্য হতে একজন বললেন- ‘‘আমাদের পরিবারের এমন রেওয়াজ নাই। পাত্রী কেমন এটাই আমাদের কাছে বড় বিষয়।’’
বাড়ির ভেতরে অহিদুলের ভাবী ও তার স্ত্রী মিনারা কাজে নিয়োজিত। তাদের সাথে অহিদুলের বোন মুক্তাও আছে। তবে আজ তার তেমন কোনো কাজ নেই। সে নতুন সালোয়ার-কামিজ পরে বসে আছে। তাকে কেন্দ্র করেই আজকের আয়োজন। একটু আগেই সে মেহমানদের সামনে থেকে প্রশ্নোত্তর পর্ব সেরে এসেছে। অহিদুল হন হন করে তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে সাজ্জাদুলের হাতটা ছেড়ে দিয়ে তার চাপা বিরক্তির প্রকাশ ঘটায়, ‘‘কত বার কইছি খেয়াল রাখবা ও যেন মেহমানগোর সামনে না যায়।’’ অহিদুলের রাগান্বিত কথা শুনে অন্যরা হতভম্ব হয়ে যায়। অহিদুলের ভাবী এগিয়ে এসে তার স্বামী সাজ্জাদুলকে নিয়ে যায়। অহিদুল ফিরে যায় মেহমানদের বসার ঘরের দিকে।
অহিদুল ঘরে ঢুকে আগের আসনে বসে। তাদের আলোচনা প্রায় শেষের দিকেই ছিল। নতুন করে আর কিছু বলারও নেই। তাই মেহমানদের মধ্য থেকে একজন বিদায় নেয়ার কথা জানালেন। আর বিয়ের ব্যাপারে চূড়ামত্ম কথা তারা পরেই জানাবেন বললেন। মেহমানরা উঠে আসেত্ম আসেত্ম বাইরে আসতে থাকেন। অহিদুল মেহমানদের সাথে বাড়ির দরজা পর্যমত্ম এগিয়ে আসে। অহিদুলের চাচা মেহমানদের সাথে কথা বলতে বলতে বড় রাসত্মার দিকে এগিয়ে যায়। অহিদুল ফিরে যায় বাড়ির ভিতরে।
ভেতর বাড়িতে সাজ্জাদুল কাচুমাচু করে অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে। অহিদুল তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। অহিদুলকে দেখে সাজ্জাদুল আরো জড়োসড়ো হয়। ইদানিং সে অহিদুলকে ভয়ও পায়, কারণ মাঝে মাঝে অহিদুল তাকে ধমক দেয়। হঠাৎ সাজ্জাদুলের ছেলেটা বাইরে থেকে দৌড়ে এসে অহিদুলের সামনে গিয়ে বলে- ‘‘চাচ্চু, একটা লোক তোমাকে ডাকছে।’’ ভাতিজার কথাটা শুনে অহিদুল দরজার দিকে আসে। দরজার বাইরে নজর করতেই দেখে মেহমানদের একজন। একটু আগেই তিনি এখান থেকে গেছেন। মেহমানদের মধ্যে একজন উনাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মিজান তালুকদার বলে। লোকটা বললেন- ‘‘অহিদুল ভাই আপনার সাথে অন্য একটি বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল। কিন্তু কথাগুলো এখন এবং এখানে বলা সম্ভব নয়। একজায়গায় যেতে হবে। এর জন্য একবেলা সময় লাগবে। আপনার সুবিধামত একটা টাইম দিলে আমি এসে আমার মোটরসাইলে করে আপনাকে নিয়ে যাব।’’
কথাটা শুনে অহিদুল চিমত্মায় পড়ে যায়। কী এমন কথা যার জন্য অন্য কোথাও যেতে হবে? মিজান সাহেবকে বেশ ভদ্র বলেই মনে হয় অহিদুলের। তাছাড়া অন্যান্য মেহমানরাও তাকে শ্রদ্ধাভাজন হিসেবে বেশ মান্য করতে দেখা গিয়েছিল। সেই হিসেবে তাকে ভালো মানুষ ভাবা যায়। কিন্তু কি বিষয়ে দরকার থাকতে পারে সেটা অহিদুলের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। সে তোনামনা করতে করতেই বলে- ‘‘আগামী পরশুদিন সকালে যেতে পারবো।’’ মিজান সাহেব বললেন- ‘‘ঠিক আছে, আমি ঐ দিন আসবো।’’ তারপর অহিদুলের দিকে হাত বাড়িয়ে মুসাফাহ্ করে চলে যায়। অহিদুল কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে তার চলে যাওয়া পথের দিকে। তারপর আবার বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।
\ ২ \
বারান্দার চৌকির উপর বসে আছে অহিদুল। অন্যদিন এ সময়টাতে সে বাইরে থাকলেও আজ বিশেষ কারণে তাকে বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে। আজ মিজান সাহেবের আসার কথা আছে। কোন বিষয়ে দরকার তা অবশ্য কিছু বলেননি। তবে তার মনে হচ্ছে মুক্তার বিয়ে নিয়ে কোনো আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
একা একা বসে থাকলে নানান চিমত্মা আসে মাথার মধ্যে। ইদানিং মুক্তাকে নিয়েই বেশি টেনশন হয় তার। ভালোয় ভালোয় মুক্তার বিয়েটা হয়ে গেলে মাথা থেকে একটা চাপ সরে যাবে। মাস দুয়েক আগে একবার এক পরিবার মুক্তাকে দেখতে এসেছিল। পাত্রী হিসেবে পছন্দ হলেও অহিদুলের পারিবারিক অবস্থার কথা জেনে তারা আর অগ্রসর হয়নি। তারা যখন শুনলো পাত্রীর বড় ভাই পাগল, অন্য ভাইয়ের রোজগারেই তাদের চলতে হয় তখন তারা আর সম্বন্ধ করতে রাজী হয়নি। গত পরশুদিন যারা দেখতে এসেছিল তারাও জেনে গেছে বড় ভাইয়ের কথাটা। অহিদুলের চাচা বলেছিল মিজান তালুকদার নামের লোকটা সেদিন বাইরে যাওয়ার পর তার সাথে সাজ্জাদুলের প্রসঙ্গে বেশ কিছু কথা জিজ্ঞেস করেছিল। উনার সাথে মোবারক হোসেনের এ বিষয়ে কথা বলার ইচ্ছে না থাকলেও তাকে সরাসরি না করতে পারেননি। সাজ্জাদুলের সমস্যার কথাটা জানার কারণে বিয়েতে তাদের অমত হবে কি না তা বোঝা যাচ্ছে না। বিয়ের ব্যাপারে তারা এখনো পিছুটানের কথা না জানালেও বিয়ের পাকা কথা এখনো হয়নি। তাই অহিদুলের মনে আশঙ্কাটা এখনো রয়ে গেছে।
হঠাৎ সেলাই মেশিনের শব্দে চিমত্মায় ছেদ পড়ে অহিদুলের। সামনের ঘরের বারান্দায় সেলাই মেশিন নিয়ে কাজে বসেছে তার ভাবী। সে মাঝে মধ্যে সেলাইয়ের কাজ করে। সংসারের সিংহভাগ খরচ অহিদুল যোগান দিলেও নিজের হাতখরচ আর একমাত্র ছেলেটার টুকটাক আবদার পূরণ করার জন্য কাজটা শিখে নিয়েছে।
অহিদুল তার ভাবীর মাঝে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে। আগে সে সবসময় হাস্যময়ী মন মেজাজে ঘোরাফেরা করলেও ভাইয়ের ঐ সমস্যা হওয়ার পর থেকে সে মনমরা হয়ে গেছে। অহিদুলের মনে পড়ে- বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তার ভাই সংসারের হাল ধরেছিল। তাকে বিয়েও করিয়েছে বড় ভাই নিজে পছন্দ করে। তার ব্যবসা করার জন্য বাজারে একটা দোকানও নিয়ে দিয়েছেন। সাজ্জাদুল নিজে ব্যবসা করতেন না। একটা মৎস্য রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ছিলেন। সুন্দরভাবেই চলছিল সংসারটা। হঠাৎ এক সময় জমি নিয়ে একটা ঝামেলা দেখা দেয়। চেয়ারম্যানের ছোট ভাইয়ের জমির পাশে তাদের পনের কাঠার যে আবাদী জমিটা ছিল সেটা সে কিনে নিতে চায়। ওটা একমাত্র পৈতৃক সম্পত্তি হওয়ায় সাজ্জাদুল বিক্রি করতে রাজি হয়নি। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। সেখানে সে মাছের খামার করতে চায়। আশে পাশের জমিগুলো সে কিনে নিয়েছে। তাই এটা তার লাগবেই। সাজ্জাদুলও একরোখা, বাবার স্মৃতিটুকু সে কোনোভাবে হাতছাড়া হতে দেবে না। এটা নিয়ে নানান ঝামেলা শুরু হয়। একসময় ব্যাপারটা মামলায় রূপ নিয়ে কোর্টে চলে যায়। জমিটা রক্ষা করার জন্য সাজ্জাদুল পেরেশান হয়ে যায়। নানাজনের কাছে যায়। দিন-রাত টেনশন করে। কাজকামেও মন বসে না তার।
জমিটা অহিদুলের রক্ষার ইচ্ছে থাকলেও পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে সে ভাইকে বুঝিয়েছিল ‘‘ওদের সাথে আমরা পারবো না, ওদের টাকা আছে, ক্ষমতা আছে। আমরা না হয় ওটা বিক্রি করে অন্য জায়গায় কিনে নেব।’’ কিন্তু সাজ্জাদুল তাতে সম্মত হয়নি। জমিটা সে কোনো মতেই বিক্রি করতে চায় না। অহিদুল ছোটবেলা থেকে ভাইয়ের অবাধ্য হয়নি। বাবা মারা যাওয়ার পর এই ভাই-ই তার সবকিছু করেছে। তাই সে যেন অসন্তুষ্ট না হয় সে জন্য তার কথার উপর কোনো কথা বলেনি।
চেয়ারম্যানের ভাই জমির মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা ঢালতে থাকে মামলার পেছনে। জমি নিয়ে কোর্টে নানান মার-প্যাচ শুরু হয়। সাজ্জাদুল কাজ-কাম ফেলে ঋণ-দেনা করে মামলা চালাতে থাকে। ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করে না। সারাক্ষণ এটা নিয়ে চিমত্মা ভাবনা করতে থাকে। একসময় মামলার রায় আসে। রায়টা চেয়ারম্যানের ভাইয়ের পক্ষে। রায় আসার পর সাজ্জাদুল খুবই ভেঙে পড়ে। সপ্তাহখানেক শয্যাশায়ী হয়ে থাকে।
একটু সুস্থ হওয়ার পর কাজে যোগদান করে। কিন্তু তার চালচলনে আগের সেই স্পৃহা আসে না। সারাক্ষণ কেমন যেন গম্ভীর হয়ে বসে থাকে। মাঝে মাঝে হিসাবও ভুল করে। এক সময় সেই ভুলের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। মালিক তাকে বিশ্রাম নেয়ার কথা বলে তার পরিবর্তে অন্য লোক নিয়োগ দেয়।
চাকুরি চলে যাওয়ার পর বাড়িতে একাকী থেকে সে অন্য রকম হয়ে যেতে থাকে। তার চলাফেরায় পরিবর্তন দেখা দেয়। মাঝে মধ্যে অস্বাভাবিক আচারণ করতে থাকে। এমনিভাবে আজকের এই অবস্থায় চলে এসেছে সে। সাজ্জাদুলের আচার-ব্যবহারে পাড়ার মানুষ ইতোমধ্যে তাকে পাগল আখ্যা দিয়েছে। সে সবসময় অস্বাভাবিক আচারণ করে না তারপরও অহিদুল মনে করে বিয়ে-সাদীর ব্যাপারে তাকে একটু দূরে রাখা ভালো। যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে তাহলে ঝামেলা বাঁধতে পারে। তাই মুক্তার বিয়ের দিনটাতে তাকে অন্য কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে রাখার সিদ্ধামত্ম নেয় সে।
ভাইয়ের জন্য খুব কষ্ট হয় অহিদুলের। কিন্তু কিছুই করার নেই। এটা যেন নিয়তিরই খেলা। ভাইয়ের আট বছরের একমাত্র ছেলেটার দিকে তাকালে অহিদুলের খুব মায়া, হয়। আগের মত আর সে বাবার কাছে বায়না ধরে না। এই বয়সে যে বাচ্চারা বাবার কাছে বিভিন্ন জিনিসের আবদার করবে সেই সুযোগটা তার নেই। ভাবীর জন্যও তার খুব খারাপ লাগে। সব স্ত্রীরাই স্বামীর কাছে প্রয়োজনীয় এটা ওটা চায়। তার ভাবী চাইতে পারে না।
অহিদুল যথাসাধ্য তার ভাবী ও ভাতিজার সব প্রয়োজন মেটাবার চেষ্টা করে। তারপরও সে জানে বাবার কাছে সমত্মান যে আবদার করতে পারে, স্বামীর কাছে একজন স্ত্রী যে অধিকার নিয়ে কিছু দাবী করতে পারে তা আর কারো কাছে পারে না। এটা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এই কথাগুলো অহিদুল যতবারই মনে করে ততবারই তার মনটা কেঁদে ওঠে। ভাবতে ভাবতে অহিদুলের চোখ দুটো ছল ছল করছে। সে হাত তুলে চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করে। হঠাৎ মটরসাইকেলের হর্নের আওয়াজে চিমত্মায় ছেদ পড়ে অহিদুলের।
অহিদুল বাইরে এসে দেখে মিজান সাহেব এসেছেন। সে উনাকে ভেতরে এসে বসার জন্য বলে। কিন্তু মিজান সাহেব আসতে সম্মত হলেন না। তিনি জানালেন, আজ আর বসবেন না, অন্য একদিন এসে বসবেন। অহিদুল আর জোর করে না। মিজান সাহেব অহিদুলকে মটরসাইকেলের পেছনে বসতে বলে। অহিদুল উঠে বসে। ঠিকমত বসেছে কি না মিজান সাহেব একবার তাকিয়ে দেখে মটরসাইকেল চালু করলেন।
\ ৩ \
একটি টং দোকানের পাশে মটরসাইকেল থামালেন মিজান সাহেব। এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খোঁজার চেষ্টা করলেন। কিছুটা দূরে একটা পাগলীর দিকে মিজান সাহেবের নজর স্থির হয়। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন- ‘‘অহিদুল ভাই, নামুন।’’ অহিদুল নামার পর মিজান সাহেবও নামলেন।
দোকানের সামনে এবং বাম পাশে কাঠের বেঞ্চ রাখা আছে। মিজান সাহেব ও অহিদুল বাম পাশের বেঞ্চটাতে বসে। বেশ কিছুক্ষণ দু’জন কোনে কথা বলে না। মিজান সাহেব নীরবতা ভাঙেন- ‘‘আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।’’ মিজান সাহেবের কথাটা শুনে অহিদুলের মনের আকাশে আশঙ্কার মেঘটা আবার কালো হতে শুরু করে। মিজান সাহেব ঐ পাগলীটার দিকে ইশারা করে বললেন, ‘‘ঐ মহিলাটার দিকে মনোযোগ সহকারে তাকান। সে কি বলছে এবং কি করছে তা বোঝার চেষ্টা করুন।’’ অহিদুল সেদিকে তাকায়। মহিলার দিকে তাকিয়ে সে ভাবতে থাকে মিজান সাহেবের সেই গুরুত্বপূর্ণ কথার সাথে এই মহিলাকে লক্ষ্য করার মধ্যে কি সম্পর্ক থাকতে পারে? কিন্তু সে কিছুই ভেবে পায় না। সে মহিলার দিকেই তাকিয়ে আছে। মহিলা কি যেন বলছে আর তার টোবলার মধ্য থেকে ছেড়া কাপড় বের করে আবার ভাজ করার মত করে সেই টোবলার মধ্যে রাখছে। দুজনই তাকিয়ে আছে পাগলী মহিলার দিকে।
কিছুক্ষণ এভাবে কেটে যায়। তারপর কথা শুরু করলেন মিজান সাহেব- ‘‘এই মহিলার বাড়ি পাশের ইউনিয়নে। তার স্বামী কোনো এক রোগে মারা গিয়েছিল। তার একটি ছেলে ছিল। যখন তার স্বামী মারা যায় ছেলেটির বয়স ছয় কী সাত বছর। স্বামীর মৃত্যুর পর সে অন্যের বাড়িতে আয়ার কাজ করে ও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাত। এভাবে কয়েক বছর কেটে যায়। প্রতিদিন সকালে ছেলেটা স্কুলে যায় আর সে কাজে বের হয়। মহিলা কাজ থেকে ফেরে দুপুরে, ছেলেটা তার আগেই চলে আসে। একদিন মহিলা কাজ থেকে ফিরে এসে দেখে ছেলেটা আসেনি। সে অপেক্ষা করতে থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয় তবু ছেলেটা ফেরে না। পাড়ার সমবয়সী অন্য ছেলেদের কাছে শুনলে তারা বলে- তার ছেলেকে তারা স্কুলেও দেখেনি। মহিলা আরো চিমত্মায় পড়ে যায়। তার সাধ্যমত বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে, কিন্তু কোথাও সাড়া মেলেনি। মহিলা চিমত্মায় চিমত্মায় ভেঙে পড়তে থাকে।’’
অহিদুল মনযোগ দিয়ে শুনছে মিজান সাহেবের কথা। মিজান সাহেব বলতে থাকলেন ‘‘দিন যায়, মাস যায় ছেলেটার খোঁজ আর মেলেনি। মহিলা চিমত্মায় চিমত্মায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। সারাক্ষণ ছেলের জন্য আহাজারি করতে থাকে। ধীরে ধীরে সে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও তার জীবন ধারণ আর আগের মতে স্বাভাবিকভাবে চলে না। ছেলের জন্য কান্নাকাটি করতো আর মানুষের কাছে শুনতো তার ছেলেকে কেউ দেখেছে কি না। ছেলের ব্যবহৃত কাপড়গুলো হাত বুলিয়ে ভাজ করে রেখে দিত। সে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত। এভাবে তার দিন পার হতে থাকে। এমনিভাবে তার অবস্থা আজকের এই পর্যায়ে। ছয়-সাত বছর যাবত সে এদিকে আসা যাওয়া করে। এই জায়গাটায় মাঝে মধ্যে বসে। সে একা একা বারংবার বলে- ‘সবাই মিথ্যে কথা কয়।’ তার বিশ্বাস তার ছেলেটা ফিরে আসবে। কিন্তু যার কাছে জিজ্ঞেস করে সে-ই বলতে পারে না। এ কারণেই সে বলে ‘‘সবাই মিথ্যে কথা কয়।’’ তার ছেলের কাপড়গুলো কাছে নিয়ে ঘুরে বেড়াত। সেগুলো হয়তো এখন আর নেই। তবু সে সব সময় কিছু কাপড় যত্ন করে পোটলার মধ্যে রাখে। কিছুক্ষণ পর পর বের করে আবার ভাজ করে রাখে।’’
কথা বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে যান মিজান সাহেব। তাতে অহিদুলও সংক্রামিত হয়। মিজান সাহেব এখন কি বলবেন তা জানে না অহিদুল। মনে মনে সে মিজান সাহেবের পরবর্তীর কথা শোনার অপেক্ষার নীরবতা পালন করে। মিজান সাহেব কিছু্ক্ষণ চুপ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন- ‘‘চলুন আরেকটা জায়গায় যেতে হবে।’’
মিজান সাহেব মোটরসাইকেলে বসে স্টার্ট দেন। অহিদুল উঠে বসলে তিনি চালু করলেন। শেষ বারের মত অহিদুলের নজরটা পাগলী মহিলার দিকে যায়। তখনও সে ব্যসত্ম আছে ছেড়া কাপড় ভাজ করার কাজে।
\ ৪ \
মিজান সাহেব এবার একটা জনবহুল এলাকায় এসে মোটরসাইকেল থামালেন। চার রাসত্মার মিলনস্থল। বেশ যানবাহনও আছে। মাঝখানে একজন ট্রাফিক পুলিশ বার বার বাঁশি বাজিয়ে শৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করছেন। জায়গাটার নাম রূপনগর। অহিদুল অগেও কয়েকবার এসেছে এখানে।
মিজান সাহেব একপাশে একটু নিরিবিলি জায়গায় এসে অহিদুলকে বললেন- ‘‘এই ট্রাফিক পুলিশকে ভালো করে দেখুন।’’ অহিদুল ট্রাফিক পুলিশের দিকে তাকায়। তার মনে একটু কৌতুহল জাগে। আগের বার না হয় একজন মহিলার জীবন কাহিনী শোনানোর জন্য তাকে দেখতে বলেছিলেন কিন্তু এবার ভালো মানুষকে কি কারণে মনোযোগ সহকারে দেখতে বললেন? প্রশ্নটা মনেই থেকে গেল। নির্দেশ মোতাবেক অহিদুল ট্রাফিক পুলিশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু তেমন কিছুই খুঁজে পায় না। শেষমেশ পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে মনে মনে মিজান সাহেবের পরের কথাগুলো শোনার অপেক্ষায় থাকে। কিছুক্ষণ নীরব থাকে দু’জন। তারপর মিজান সাহেব বললেন- ‘‘একটা ছেলের খুব ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে পুলিশ হবে। তাদের গ্রামে আসা কোনো এক পুলিশ অফিসারের কার্যক্রম দেখে তার মনে এই স্বপ্নের উদয় হয়েছিল। ছেলেটার নাম মতি। তখন সে ক্লাস ফাইভের ছাত্র। ছেলেটার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ারও অবস্থা ছিল না। তবু ছেলেটার ইচ্ছে- যেভাবে হোক সে বড় হয়ে পুলিশ হবে। তখন ১৯৮৮ সাল। এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো। লন্ডভন্ড হয়ে গেল দেশের লক্ষ লক্ষ ঘরবাড়ি। মারা গেল অগুনতি মানুষ। সেই দুর্যোগে ছেলেটির মা-বাবা দুজনই মারা যায়। সৌভাগ্যক্রমে ছেলেটি বেঁচে যায়। তাকে আগলে রাখার মত কেউ ছিল না। সে যেন বেঁচে গিয়ে আরো বিপদে পড়লো। সেই সময়টাতে সবাই বিপদগ্রসত্ম হওয়ায় সবাই নিজেদের নিয়েই চিমত্মামগ্ন ছিল। ছেলেটি দিশেহারা হয়ে পড়ে, কারো কাছে ঠাঁই পায় না।’’
মিজান সাহেব কথা থামিয়ে অহিদুলের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন অহিদুলের মন এদিকে আছে কি না। অহিদুল বলে- ‘‘তারপর..’’। মিজান সাহেব আবারও বলতে থাকেন- ‘‘ছেলেটি মা-বাবাকে হারিয়ে যেন অকূল পাথারে পড়ে যায়। পেট বাঁচানোর জন্য একটা দোকানে কাজ নেয়। পড়াশুনার তো প্রশ্নই আসে না। কাজ করে, কিন্তু তার মনের মধ্যে সেই স্বপ্নটা উঁকি দেয়, পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন। মাঝে মাঝে সে কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। একদিন মালিক তাকে বের করে দেয়। তারপর সে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। একদিকে মা-বাবা হারানোর কষ্ট, অন্যদিকে স্বপ্ন। খেয়ে না খেয়ে এভাবে তার দিন যেতে থাকে। মাঝে মাঝে সে আনমনা হয়ে যায়, তার যেন মনে হয় সে সত্যিই একজন পুলিশ। কল্পনার আসামীকে নানান জেরা করে। এসব করে সে যেন আনন্দ পায়। এভাবেই তার দিন পার হতে থাকে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পার হয়। মনে-প্রাণে সে একজন পুলিশ হয়ে ওঠে। সবসময় পুলিশী মেজাজে, ভাবগাম্ভীর্যের সাথে কথা বলে। কেউ কেউ তার এমন আচারণ দেখে তাকে টিটকারী করে। কিন্তু সে সেভাবেই চলতে থাকে। সেদিনের সেই ছেলেটাই আজকের এই ট্রাফিক পুলিশ।
বছর দুয়েক আগে এই এলাকার একজন মানুষ তাকে পুলিশের বাদ দেয়া এই পোশাকের ব্যবস্থা করে দেয় এবং এখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে বলে। পোশাক পেয়ে এবং এখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে পেরে মতি খুব খুশি। সে যেন তার স্বপ্ন রাজ্যের আধিপত্য অর্জন করলো। সে অন্য কোনো পাগলামী করে না। সারাদিন তার চা নাসত্মার অভাব হয় না। কেউ কেউ খুচরা টাকা পয়সাও দেয়। এভাবেই চলে ওর দিন। স্থানীয় লোকজন ছাড়া বাইরের কেউ জানে না যে, এই লোকটা আসলে মানসিক সমস্যাগ্রসত্ম। খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের সমাজে যাদের আচার আচারণ স্বাভাবিক নয় অর্থাৎ সহজ কথায় আমরা যাদের পাগল বলি তাদের প্রত্যেকের পেছনে এ ধরনের কারণ থাকে। সেই কারণগুলো তাদেরকে ধীরে ধীরে এই পরিণতির দিকে নিয়ে আসে।
আপনার বড় ভাইয়ের কথা আমি আপনার চাচার কাছ থেকে শুনেছি। আমি এটাও শুনেছি যে, আপনার ভাইয়ের ঘটনাটা বেশিদিন আগের নয়। আমরা যদি চেষ্টা করি আর আল্লাহ্ যদি সহায় হন তাহলে হয়তো তাকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যাবে। সেই উদ্দেশ্যেই আপনাকে এই দুটি মানুষের কাছে নিয়ে এলাম এবং তাদের এমন জীবনের কারণগুলো শোনালাম। আমাদের সমাজে এদের মত যত মানসিক সমস্যাগ্রসত্ম মানুষ আছে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের প্রত্যেকের পেছনেই বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনাজনিত কারণ রয়েছে। প্রত্যেকটা মানুষের মসিত্মষ্কের একটা ধারণ ক্ষমতা থাকে। মানুষ যদি দুঃখ পায় বা দুশ্চিমত্মা করে তবে তা সহ্য করার মত একটা সত্মর থাকে। যখন তার কষ্ট বা দুশ্চিমত্মার মাত্রা তার সহনশীল ক্ষমতার সত্মরকে অতিক্রম করে তখন তার আচার-আচারণে কিছুটা অস্বাভাবিক রূপ দেখা যায়। কোনো কোনো মানুষ সেই শোক বা কষ্টের প্রতিক্রিয়া কিছুদিন পর কাটিয়ে উঠতে পারে আবার কেউ কেউ তা পারে না। ধীরে ধীরে তারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। তাদের সকল কাজ-কর্মে তাদের মনের সেই চিমত্মার ছায়া পড়ে। আর তারা সেই চিমত্মার মধ্যেই স্থির থাকে। যেমন ঐ মহিলাটা। এত বছর হয়ে গেল অথচ এখনও তার কাছে তার বাচ্চাটা ছোট অবস্থায় আছে। এটা অধিকাংশ মানসিক সমস্যাগ্রসত্ম মানুষদের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
আপনার বড় ভাইয়ের সমস্যাটা যদি জমিজমা সংক্রামত্ম হয়ে থাকে তবে নিশ্চয় তার কথাবার্তায় জমি কেন্দ্রিক দুশ্চিমত্মার কথা উঠে আসে, যেটা নিয়ে সে আগে দুশ্চিমত্মা করতো। জমির ফয়সালা হয়েগেলেও তার মন ঐ আগের জায়গাতেই রয়ে যাবে। এখনো সে মনে করবে তার জমিটা হয়তো কেউ দখল করে নেবে। আপনার ভাইয়ের কথাবার্তায় কি এমন কোনো আশঙ্কা ফুটে উঠে?’’
অহিদুলের প্রশ্নে জানায়, তার ভাই মাঝে মধ্যে ভালো আচরণ করে আবার মাঝে মধ্যে অস্বাভাবিক আচারণ করে। অস্বাভাবিক আচারণ করার সময়টাতে সে এ কথাও বলে যে, ‘‘বাবার জমি কাউকে দেব না’’, অথচ সেই জমি এক বছর আগেই মামলার রায়ের মাধ্যমে তাদের দখল ছাড়া হয়েছে।
মিজান সাহেব কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন- ‘‘এতে বোঝা যায়- সে এই জমি রক্ষা করার জন্য অনেক চিমত্মা ভাবনা করতো। তার আশঙ্কা ছিল কেউ বুঝি জমিটা গ্রাস করবে। এটা নিয়ে তার সবসময় দুশ্চিমত্মা হতো। সেই দুশ্চিমত্মাটা আজও তার মধ্যে কাজ করে। দুশ্চিমত্মা অধিকাংশ মানসিক রোগীর মনে একটা গভীর অবস্থান তৈরি করে। তার মন থেকে সেটা সরাতে পারলে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর যদি তা না পারা যায় তবে ধীরে ধীরে আরো গভীরে চলে যাবে। হয়তো কোনো এক সময় ঐ পাগলী মহিলার মত হয়ে যেতে পারে। মহিলাটা যেভাবে তার ছেলের পোশাক মনে করে কিছু ছেড়া কাপড় গুছিয়ে রেখেছে তেমনিভাবে আপনার ভাইও হয়তো কিছু কাগজকে জমির দলিল ভেবে পরম মমতায় আগলে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। আপনি নিশ্চয় আপনার ভাইয়ের এমন পরিণতি চান না। যতদূর শুনেছি আপনার ভাইয়ের সমস্যাটা বেশি দিনের নয় এবং তার এই সমস্যা সবসময়ও হয় না। তাহলে আমরা বুঝতে পারি- যখন তার মসিত্মষ্কে সেই ভাবনার কথাটা ভর করে তখন সে অস্বাভাবিক হয়ে উঠে। সেই ভাবনাটা তার কাছে গভীর, আমাদের চেষ্টা করতে হবে সেই ভাবনাটা যেন তার কাছে হালকা হয়ে যায়।
অহিদুল জানতে চায়- ‘‘এটা কীভাবে সম্ভব?’’ মিজান সাহেব বলেন- ‘‘কোনো শিশু যদি কোনো জিনিস নেয়ার বায়না ধরে তখন আমরা তা দিতে না চাইলে সেই জিনিস সম্পর্কে নেগেটিভ কথা বলি, যেন সেই জিনিসটার প্রতি তার আগ্রহটা কমে যায়। আর এর পরিবর্তে যদি অন্য কোনো জিনিস দিতে চাই তবে আমরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, ঐ জিনিসের চেয়ে এটা ভালো। ঠিক এ ধরনের একটি পথ আমাদের অবলম্বন করতে হবে। মোটামুটি ভালো লোকেশনের একটা জমির ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে আমি আপনাদের যথাসাধ্য সাহায্য করবো। তার আগে আরেকটি কাজ করতে হবে, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এটা আপনার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদেরকেই করতে হবে।’’
অহিদুল আরো মনোযোগ দেয় মিজান সাহেবের কথায়। মিজান সাহেব বলতে থাকেন- ‘‘সাধারণত কেউ অস্বাভাবিক আচরণ করলে সবাই তাকে এড়িয়ে চলে, অবজ্ঞা করে। এতে তাকে সেই পথেই বেশি করে ঠেলে দেয়া হয়। আমাদেরকে এটাই আগে বর্জন করতে হবে। আপনার ভাইকে কোনো অবস্থাতেই অবজ্ঞা বা অবহেলা করা যাবে না। তাকে সবসময় হাসি-খুশি ও সহায়ক পরিবেশের মধ্যে রাখতে হবে, যেন দুশ্চিমত্মা থেকে সে দূরে থাকে। তাকে আগের অবস্থায় আনতে হলে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। পারিবারিক যে কোনো অনুষ্ঠানের মধ্যে তাকে আনন্দঘন পরিবেশের সাথে ব্যসত্ম রাখতে হবে। এতে করে তার মনে দুশ্চিমত্মা আসার সুযোগ থাকবে না। আর সে যদি কখনো ঐ জমির কথা তোলে তখন তাকে এমনভাবে বোঝাতে হবে যাতে তার মন থেকে আগের জমির টান কমতে থাকে। পাশাপাশি একটি নতুন জমির কথা তুলে ধরতে হবে যেটা আগেরটার চেয়ে অনেক সুবিধাপোযোগী। তাকে যদি বোঝাতে সক্ষম হন যে, আগের জমিটা না হলেও আপনাদের কোনোরকম সমস্যা নেই তাহলে ধরে নিতে পারেন মিশন সাফল্যের দিকে।’’
মিজান সাহেবের কথা শুনে অহিদুলের মনে যেন একটা সম্ভাবনার আশা জাগে। অহিদুলের মুখের দিকে তাকিয়ে মিজান সাহেবও যেন এক আশাবাদী মানুষের মুখচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন। তিনি মোটরসাইকেলের চাবিটা হাতে নিয়ে বললেন- ‘‘চলুন, আজ ফেরা যাক।’’ দু’জন মোটরসাইকেলের দিকে হাঁটতে থাকে।
\ ৫ \
অহিদুলের বাড়িতে আজ অনেক মানুষের সমাগম। একমাত্র বোন মুক্তার বিয়ে। আত্মীয় স্বজনের সাথে মিলেমিশে কাজ করে যাচ্ছে অহিদুলের বড় ভাই সাজ্জাদুল। বিয়ের দিনে সাজ্জাদুলকে কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাখার সিদ্ধামত্ম থাকলেও মিজান সাহেবের কথামতো তা বাতিল করা হয়েছে। নিজের পরিবারের লোকজন ছাড়াও আত্মীয় স্বজনরা এখন সাজ্জাদুলের প্রতি বেশ ধৈর্যশীল।
অহিদুল ব্যসত্মতার মাঝেও ভাইয়ের প্রতি খেয়াল রাখছে। ভাইয়ের দিকে তাকাতে তার খারাপ লাগে। সুস্থ থাকলে তিনিই আজ সব কিছুর তদারকি করতেন। ছোট বেলায় ভাইয়ের শাসনের কথাগুলো তখন শুনে রাগ হলেও এখন সেগুলোই অহিদুলের কাছে সবচেয়ে মধুর মনে হয়। বড় ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অহিদুল কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তার মুখের দিকে তাকিয়ে নতুন দিন খুঁজে ফেরে, যেখানে তার বড় ভাই বটবৃক্ষের মত ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছে তাদের পরিবারের সবাইকে। 

# # #